আদিবাসী গারোরাও আজ আর নিরাপদ বোধ করছে না। বনবাসী এই গারো সম্প্রদায় শান্তিপ্রিয় নাগরিক হলেও তাদের ওপর অশান্তির আগুন ছড়িয়ে দিচ্ছে কতিপয় সন্ত্রাসী। নির্বাচনপরবর্তী সহিংস ঘটনার আঁচড় এদেরও ছিঁড়ছে । মধুপুর বনাঞ্চলের প্রায় ১৬ হাজার গারো আদিবাসী সন্ত্রাসীদের ভয়ে মারাত্মক আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সরকারী-বেসরকারীভাবে কেউ তাদের পাশে নেই বলে বহু অভিযোগ শোনা গেছে। তাদের অপরাধ তারা নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছে। গোটা টাঙ্গাইলে হিন্দু সংখ্যালঘু এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর দিনের পর দিন আক্রমণ করা হচ্ছে। একই আক্রমণে আদিবাসীরাও শঙ্কিত। শুক্রবার মধুপুর জলছত্র শান্তিনিকেতনে ‘আবিমা ইয়ুথ এ্যাসোসিয়েশন’ (আজিয়া) আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি ভালোয় ভালোয় হলেও পুরো সময়টাই ছিল শঙ্কাপূর্ণ। মধুপুর শাল বনাঞ্চলে জোট নেতাকর্মীদের সন্ত্রাস শুরু হয়ে গেছে। এখানকার আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের ওপর এই সন্ত্রাস চলছে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় এই সম্প্রদায়ের লোকজন ব্যাপক অবদান রাখে। সেই সময় থেকে গারোরা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আসছে। এবারও নৌকায় ভোট দিয়েছে বেশিরভাগ। কিন্তু এবার তাদের ওপর এ কারণে নির্যাতন নেমে এসেছে। জলছত্র শান্তিনিকেতনে আবিমা গারো ইয়ুূথ এ্যাসোসিয়েশনের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুক্রবার শুরু হয় বেলা ১২টার দিকে। এই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের এমপি (মধুপুর-ধানবাড়ী থেকে নির্বাচিত) ড. আব্দুর রাজ্জাক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় শান্তিনিকেতনের পাশেই ‘কর্পোস খ্রিষ্টী মিশনে’ সন্ত্রাসীরা আক্রমণচালায়। এখানে ব্যাপক ভাংচুর করে। ফাদার হ্যামলেট নামক এক যাজককে নানারকম ভয়ভীতি দেখানো হয় বলে জানা যায়। মিশনে হামলার সঙ্গে জড়িতদের একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা মিশনে হামলা করেনি, তবে মিশনের লোকজনদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে মাত্র। এদিকে ড. আব্দুর রাজ্জাক জনকন্ঠকে জানান, “সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে হরিনাতৈল গ্রামের অর্ধেক মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে, বিভিন্ন গ্রামে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মহড়াদিচ্ছে। গোবিন্দ নামের এক ব্যাবসায়ীকে ২ লাখ টাকা চাঁদা ধরেছে⎯ না দিলে মেরেফেলবে। অব্যাহত সন্ত্রাসী ঘটনা চলছেই। আদিবাসিদের ওপরও একইভাবে অত্যাচার চলছে।আমি নিজে ডিসি, এসপি এ বিষয়গুলি সম্পর্কে অবহিত করেছি, কোন লাভ হচ্ছে না। বেশকিছু মামলাও হয়েছে, পুলিশ কোন ভূমিকাই রাখছে না। চারদিকে লুটপাট, সন্ত্রাস ছাড়াআর কিছুই নেই । মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙ্গেচুরে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে কোন প্রতিকার নেই । এমন অবস্থা চলতে থাকলে মানুষগুলোর পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন পথ নেই। আমি এর
প্রতিকার দাবি করছি। ”

দৈনিক জনকন্ঠ, ১৩ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন