ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আহত হয়েছে ১০ জন। এর মদ গুরুতর অবস্থায় নগরকান্দা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন উপজেলার ফুলসুতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বকুল চৌধুরী (৪২)। পাশ্ববর্তী গ্রামের একটি হিন্দুবাড়িতে সন্ত্রাসীরা আগুন দিলে তা দেখতে গিয়ে তিনি আক্রান্ত হন। ’৭১ সালের চেয়েও পাশবিক কায়দায় ধ্বংসযঞ্জ চালিয়ে লুটপাট করা হয়েছে উপজেলার তামলা ইউনিয়নের মানিকদি গ্রামের প্রফেসর রনজিৎ কুমার মন্ডলের বাড়ি। ১৯৭১ সালেও এ বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়েছিল এবং হত্যা করা হয়েছিল রনজিৎ কুমারের বাবা নিতাই মণ্ডলকে। এবারের ঘটনা তারই পুনরাবৃত্তি বলে বর্ণনা করেন শহীদ নিতাই মন্ডলের স্ত্রী রেণুবালা মণ্ডল (৬৫)। জানা গেছে, ৭ অক্টোবর সকাল ৮টায় মানিকদি গ্রামের দবিরুদ্দিন মোল্লা, রাজ্জাক ভুঁইয়া, শামসু খলিফা ও পাশ্ববর্তী শাকপালদিয়া গ্রামের চাঁন মোল্লা, ইউনুচ মোল্লা এবং মোয়াজ্জেমের নেতৃত্বে ৫ শতাধিক লোক রামদা, ঢাল-সড়কি সজ্জিত হয়ে সকাল ৮টার সময় এ বাড়ি আক্রমণ করে। বৃহৎ এ বাড়ির ৪টি ঘরেই তারা ভাংচুর চালায় এবং সর্বস্ব লুটে নেয়। এ সময় শিশু কৃষ্ণা ভাত খাচ্ছিল। তার ভাত ফেলে দিয়ে প্লেট কেড়ে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। বাড়ির লোকজন এ সময় প্রতিবেশী শাহজাহান মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নিলে দুর্বৃত্তরা সে বাড়িতেও আক্রমণ চালায়। এ সময় বিধবা আয়সা খাতুনের ঘরে দুর্বৃত্তরা চড়াও হয়। দুর্বৃত্তদের হাত-পা ধরে আয়শা খাতুন রেহাই পেলেও তাকিয়ে দেখে মণ্ডলের বাড়ির সবাই বিলের দিকে চলে গেছে। আর তাদের বাড়ির মালপত্র নিয়ে যাচ্ছে পরিচিত লোকেরা। এ বাড়ি থেকে লুটে নেয়া সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১শ’ ৬৫ মণ ধান, ৭ ভরি সোনার গয়না, ৪০ মণ পেঁয়াজ, ৩২ কেজি পেঁয়াজের দানা (যার কেজি ১২’শ টাকা)। পাওয়ার পাম্প মেশিনের মোটর পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এ বাড়ির দুটো গরু, যার দাম ৪০ হাজার টাকারও বেশী, তাও জবাই করে খেয়ে ফেলেছে এরা। সরকারবাদী মামলা হয়েছে⎯ধরা পড়েছে ৯ জন কিন্তু হুমকি এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে জানা যায়। অন্যদিকে এ অঞ্চলের হিন্দু বাড়ি গুলোতে ঘুরে দেখা গেছে অদৃশ্য এক আতংক তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে এ অঞ্চলকে। এই ইউনিয়নের রসুলপুর বাজারের আওয়ামী লীগ কর্মী সদানন্দ সাহাকে ব্যাপক ভাবে মারধর করে সন্ত্রাসীরা এবং চাঁদা দাবি করেছে। টাকা দিতে না পারায় সদানন্দ এখন গ্রাম ছাড়া।
আজকের কাগজ, ১৬ অক্টোবর ২০০১