পিরোজপুর। দক্ষিনাঞ্চলের সেই জেলা সদর থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর রাজাকার নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। আর নির্বাচনের পর থেকেই পিরোজপুরের গ্রামগুলো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী আর সংখ্যালঘু নাগরিকদের জন্য বিপজ্জনক জনপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগুন দেয়া হচ্ছে সংখ্যালঘুর বাড়িতে মল ঢেলে দেয়া হচ্ছে। নির্বাচনের পর থেকেই পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর, মঠবাড়িয়া, স্বরুপকাঠির গ্রাম ̧লোতে চলছে এসব ভীতিকর নানা ঘটনা। ওই এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে চলছে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনাসমগ্র। উদ্বেগজনক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এর মাঝে বিভিন্ন দলের নেতৃত্ববৃন্দ, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে কয়েকদিন ধরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নানা অত্যাচার, নির্যাতন, লুটপাট, মন্দির ভাঙ্গাসহ নানা ঘটনার শুধু নিন্দাই করা হয়েছে। সন্ত্রাসীরা নাজিরপুরের ছাচিয়া বাজারে লুটপাট করে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে। দীর্ঘা গ্রামের ক্ষীতিশচন্দ্র মণ্ডল, কালীপদ মৃধার সারা গায়ে এখন জামায়াতী ক্যাডারদের বর্বরোচিত মারধরের দাগ-চিহ্ন। রুহিতলা, বুনিয়া গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার সময় মেয়েদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করা হয়। কাপড় ব্যবসায়ী নিহার হালদার মারধরের শিকার হয়েছেন মৌলবাদী আক্রোশে। সমীন্দ্রনাথ হালদারেরওষুধের দোকানে হামলা-লুটপাট হয়েছে । পরিসংখ্যান বিভাগের উপজেলা কর্মকর্তা বিমল বাবুর শিক্ষিকা স্ত্রী স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছেন। মৌলবাদী পাণ্ডারা তাঁর বস্ত্রহরণের অপচেষ্টা চালিয়েছে। পুরো এলাকার সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারগুলো নানা নিরাপত্তা সমস্যায় পড়েছে। বসুনাথের বাড়িতে গিয়ে আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়েছে⎯ তাঁর ছেলেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে হাতে তুলে দিতে হবে, নতুবা তাদের উচ্ছেদ করা হবে ভিটামাটি থেকে। বসুনাথের ছেলের অপরাধ সে নৌকার পক্ষে কাজ করেছে। বালিপাড়া ও ইন্দুরকানি এলাকার আওয়ামী লীগ কর্মী ও সংখ্যালঘু যুবকরা নির্যাতনের আতঙ্কে আশ্রয় নিয়েছে অন্য এলাকাগুলোতে। পাড়েরহাটের ননীগোপাল হালদার ও বেণু বাবুকে বেধড়ক মারধরের পর পুরো এলাকাটিতে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। ব্রাহ্মণকাঠির শংকর হালদারের বাড়িতে হামলার পর সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এসব পরিস্থিতির মধ্যে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী শুক্রবার শোকরানা সভা করেছেন পিরোজপুরে। তিনি সেখানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা না করতে কর্মীদের প্রতি আহবান জানালেও তারা তা শোনেনি। সাঈদীর ওই সভার পর থেকে মুলত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে পুরো জেলায় সংখ্যালঘুর ওপর হামলার ঘটনা। উল্লেখ্য, নির্বাচনের প্রচারের সময়ই দেলোয়ার হোসেন সাঈদী বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে পিরোজপুর শহরের জনসভায় বলেছিলেন⎯ সেখানে নির্বাচন হচ্ছে হিন্দু-মুসলমানের। হিন্দু ভোটারদের সংখ্যা উল্লেখ করে সাঈদী সেখানে প্রকাশ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সুধাংশু শেখর হালদারকে হুমকি দেন। বেগম খালেদা ওই সভায় বলেছিলেন⎯ সাঈদীকে ভোট দেয়ার অর্থ হচ্ছে তাঁকে ভোট দেয়া। বেগম জিয়া দলের নেতাকর্মীদের সেখানে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর নির্বাচনের জন্য কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। খালেদার নামে ভোট নিয়ে সাঈদীর লোকজন এখন হিন্দু সম্পত্তিতে হামলা করছে। হামলা করছে সংখ্যালঘু হিন্দু আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দেখে দেখে।

দৈনিক জনকণ্ঠ, ৭ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন