সাদা পোশাকে ৭-৮ জনের একটি দল রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস ও বাসাবাড়িতে গিয়ে জামায়াত-শিবির অনুপ্রবেশের দোহাই দিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন থেকে সরে যেতে হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

শিক্ষার্থীরা এ অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ৫ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে রবির রেজিস্ট্রার সোহরাব আলীর মাধ্যমে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি আব্দুল লতিফ বরাবর লিখিত স্মারকলিপি প্রদান করেন।

এ সময় তারা রেজিস্ট্রারকে জানান, এ ঘটনার পর থেকে তারা পুলিশের গ্রেফতার আতঙ্কে ভীত ও শঙ্কিত। এ সময় তারা ভিসির কাছে তাদের নিরাপত্তা দাবি করেন। এদিকে দুপুরে এ অভিযোগ করা হলেও রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শাহজাদপুর থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেনি বা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে বলেননি বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী রুকাইয়া সুস্মিতা জানান, মহিলা পুলিশ ছাড়াই ডিএসবি পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকে ৭-৮ জনের একটি দল সোমবার আমাদের বাসায় এসে আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার জন্য আমাকে এবং আমার পরিবারকে হুমকি দেয়।

অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সাদ বিন শফিক দ্বারিয়াপুরের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। সেখান থেকে তাকে এবং বিভিন্ন এলাকায় থাকা ছাত্রদের দ্বারিয়াপুরের বিসিক রোডের শাহ মখদুম ছাত্রাবাস-২ এ ডেকে নিয়ে আসে ডিএসবি পরিচয়ের পুলিশ।

এসব ছাত্রদের মধ্যে সাদ বিন শফিক ও হাসিবুর রহমান বলেন, ডিএসবি পুলিশের ১০ থেকে ১২ সদস্যের একটি দল তাদের আন্দোলন থেকে সরে যেতে হুমকি দেয়।

আন্দোলনরত ছাত্ররা জানান, কোনো একটি মহল তাদের এ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ভিন্ন খাতে নেওয়ার অপচেষ্টা করছে। এছাড়া সুষ্ঠু তদন্তে বিঘ্ন ঘটাতেই ডিএসবি পুলিশের এ অপতৎরতা বলে তারা মনে করেন।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার দায়িত্বে নিয়োজিত ডিএসবি পুলিশের এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, ৮ জন নয়, আমরা সেখানে গিয়েছিলাম ৪ জন। আমাদের কাছে ইনফরমেশন ছিল, এ আন্দোলনে জামায়াত-শিবির ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য ছাত্রদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেখানে যাই। সোমবার বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কথা বলি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সৌজন্যতা রক্ষা করেই কথা বলা হয়েছে। তাদের কাউকেই কোনো হুমকি দেওয়া হয়নি। ইনফরমেশনের জন্য আমরা সেখানে যেতেই পারি।

তিনি আরও বলেন, স্মারকলিপিতে পরোক্ষভাবে হুমকির কথা বলা হয়েছে। ফলে হুমকির বিষয়টি সত্য নয়।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার ওসি শাহিদ মাহমুদ খান বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। কেউ আমাকে কিছু জানায়নি। এ বিষয়ে রবির দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসিও আমাকে কিছু বলেননি। তারা জানালে ওই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কাটার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব খান মোহাম্মদ আরমানের কাছে অসুস্থতার কথা বলে ২ সপ্তাহের সময় চেয়ে একটি লিখিত আবেদন করেছেন। আমরা তাকে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ৩ দিনের সময় দিয়েছি। এর আগে বুধবার পর্যন্ত তাকে ৭ দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল। নির্যাতনের শিকার ওই ১৪ শিক্ষার্থীসহ ৫৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন জানান, আমি ২ সপ্তাহের সময় চেয়ে একটি আবেদন করেছি তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব বরাবর। তার কোনো জবাব পাইনি।

এ বিষয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী জানান, এ সংক্রান্ত একটি স্মারকলিপি পেয়েছি। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ভিসিকে অবহিত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রদের নিরাপত্তার প্রশ্নে ভিসির সঙ্গে পরামর্শ করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফ জানান, আমাদের শিক্ষার্থীদের ডিএসবি পুলিশের হয়রানির বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো হয়রানির শিকার হতে না হয় সেজন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।

উল্লেখ্য, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা কর্তৃক ১৪ ছাত্রের মাথার চুল কর্তনের ঘটনায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাত থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। গত শনিবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সুবিচারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার পর্যন্ত আন্দোলন শিথিল করে। এ অবস্থায় ডিএসবি পুলিশের আচরণে আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রবির ক্যাম্পাস। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা চেয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসির কাছে।

যুগান্তর

মন্তব্য করুন