সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় মাদ্রাসা শিক্ষকের থাপ্পড়ে কানের পর্দা ফেটে শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেছে ৬ বছরের শিশু রিফাত হোসেন।

সে খুকনি ইউনিয়নের রূপনাই গ্রামের দরিদ্র মোটরমেকানিক বুলবুল ইসলামের ছেলে। রিফাত হোসেন বেলকুচি উপজেলা ও এনায়েতপুর থানার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের বন্ধন তালিমুল কোরআন নুরানিয়া ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণির ছাত্র।

মাদ্রাসাটি বাড়ির কাছে হওয়ায় রূপনাই গ্রামের অধিকাংশ শিশু শিক্ষার্থী এ মাদ্রাসায় পড়ে থাকে। ২ মার্চ সোমবার সকালে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আমিরুল ইসলামের থাপ্পড়ে তার কানের পর্দা ফেটে যায়। ফলে তার বাম কানের শ্রবণশক্তি হারায়।

এ বিষয়ে বুলবুল ইসলাম জানান, ওই মাদ্রাসায় প্রায়ই শিশু শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। আশপাশ এলাকার ১৫ থেকে ২০ জন শিশু শিক্ষার্থী শিক্ষকের নির্যাতনে এ পর্যন্ত ওই মাদ্রাসা ত্যাগ করেছে। প্রতিনিয়ত এ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করে নির্যাতন আতংক। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় একের পর এক এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।

তিনি জানান, গত ১৩ বছর আগে গোপালপুর বন্ধন তালিমুল কোরআন নুরানিয়া ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই এখানে শিশু শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। ১ বছর আগে এ এলাকার এক শিশুকে নির্মম নির্যাতনের কারণে ওই মাদ্রাসার এক শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার পরও এ মাদ্রাসায় শিশু শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধ হয়নি। সোমবার শিশু রিফাতকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

বুলবুল ইসলাম আরও জানান, শিশু রিফাত বসা নিয়ে দুষ্টামি করায় মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আমিরুল ইসলাম শিশু রিফাতের কানে সজোরে থাপ্পড় দেন। যন্ত্রণায় চিৎকার করতে করতে সে বাড়ি চলে আসে। এরপর রাতে সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার কান দিয়ে রক্ত ঝড়তে থাকে। দ্রুত তাকে সিরাজগঞ্জের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।

তিনি জানান, ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. শফিউল ইসলাম তার কান পরীক্ষা করে জানান- প্রচণ্ড আঘাতের কারণে কানের পর্দা ফেটে গেছে। ফলে সে আর কানে শুনতে পারছে না। চিকিৎসা শেষে ৫ মার্চ বুধবার সকালে তাকে বাড়ি আনা হয়। এখন সে বাড়িতেই শয্যাগত রয়েছে।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ১ বছর আগেও এ মাদ্রাসার এক শিক্ষক আমার ছেলেকে মারধর করেছিল। এ বিষয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির কাছে অভিযোগ দিলে সালিশ-বৈঠকের মাধ্যমে তা মীমাংসা করা হয়। আবারও আমার সন্তান রিফাতকে মেরে কানের পর্দা ফাটিয়ে দিয়েছে মাওলানা আমিরুল ইসলাম। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

তিনি বলেন, এ মাদ্রাসার শিক্ষকদের নির্যাতনে রূপনাই পূর্বপাড়া গ্রামের আসাদুল ইসলামের মেয়ে জুবায়দা (৬), রিপনের ছেলে আলিফ (৫), হারুনের ছেলেসহ (৮)অন্তত ১৫/২০ জন শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়ে এ মাদ্রাসা ত্যাগ করেছে।

এ বিষয়ে জুবায়দার দাদা নওশাদ আলী অভিযোগ করেন,এ মাদ্রাসাটি এখন শিশুদের জন্য আতংক। কোমলমতি শিশুদের আদর করে পাঠদানের পরিবর্তে সেখানে চলছে নির্মম নির্যাতন। এ বিষয়ে অভিযোগ করলেও কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয় না। তাই প্রশাসনের কাছে দাবি ওই মাদ্রাসার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক। এ বিষয়ে মাওলানা আমিরুল ইসলাম মোবাইল ফোনে জানান, ঘটনার দিন বসা নিয়ে শিশুরা চেঁচামেচি ও দুষ্টামি করছিল। এটা থামাতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে বিষয়টি মীমাংসার পর্যায়ে রয়েছে।

এ বিষয়ে বন্ধন তালিমুল কোরআন নুরানিয়া ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাজী বাবুল মোল্লা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতনের ঘটনাটি খুবই বেদনাদায়ক। এর আগেও এ রকম ঘটনার দায়ে এক শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাই মাওলানা আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা জানান, মাদ্রাসাটি বেলকুচি উপজেলার মধ্যে। তাই বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. রহমত উল্লাহ জানান, ঘটনাটি হৃদয়বিদারক। তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যুগান্তর

মন্তব্য করুন