সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। যে সব এলাকায় সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে, সেখানকার গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহকে স্থানীয় পর্যায়ে এ ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ উদ্যেগ গ্রহণের জোর অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে সরকারকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যে ১২ বিশিষ্ট ব্যক্তি বুধবার এক যুক্ত বিবৃৃতিতে এসব আহ্বান ও অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা হলেন, সরদার ফজলুল করিম, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আহমেদ কামাল, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, পারভিন হাসান, জাহেদা আহমেদ, হাসনা বেগম, হোসেন জিল্লুর রহমান, আকমল হোসেন, চৌধুরী রফিকুল আবরার, তাসনিম সিদ্দিকী ও এমএম আকাশ। এছাড়া বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, নিজেরা করি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে এবং মহিলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ বিবৃতির মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন সম্পর্কে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করেছে। ১২ বিশিষ্ট ব্যক্তির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের প্রাক্কালে প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একদল সুযোগসন্ধানী দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়ে এক ভীতিপ্রদ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এসব সুযোগসন্ধানী দুষ্কৃতকারীকে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। তাঁরা আশা প্রকাশ করেন, আসন্ন দুর্গাপূজা যাতে নির্বিঘ্নে ও উৎসব মুখর পরিবেশে সম্পন্ন হতে পারে সরকার ও সমাজের সর্বস্তরের জনসাধারণ সেজন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে স্বার্থান্বেষী রাজনীতির দাবার ঘুঁটি হিসাবে ব্যবহার না করে তাদের সকল প্রকার নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার কথা তাঁরা দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে স্মরণ করিয়ে দেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, নিজেরা করি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন ও তাদের ভয়ভীতি দেখানো সম্পর্কে মাঠ পর্যায়ে খোঁজখবরের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া, যশোরের কেশবপুর, মনিরামপুর, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, বাগেরহাটের রামপাল, বরগুনা জেলার বামনা ও পাথরঘাটা এবং ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন হয়েছে। তবে যারা নিজ নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে তাদের ৬০% ভয়ে-আতঙ্কে তা করেছে। অন্যদের নির্যাতন ও হুমকির মুখে এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। এসব সংগঠন বলেছে, বর্তমান সঙ্কটে কোন রাজনৈতিক দলের নেতা অথবা এমপিরা সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। কেউ আন্তরিকতার সাথে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে না। রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ ও নানামুখী প্রচার-প্রচারণায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের মতো মানবিক সঙ্কটের সমাধান না হয়ে জটিল আকার ধারণের পথ প্রশস্ত হচ্ছে। সরকার চেষ্টা করলেও এলাকার জনসাধারণ যদি প্রতিরোধে এগিয়ে না আসে, পুলিশবাহিনী দ্বারা সংখ্যালঘুদের আস্থা ফেরানো সম্ভব নয়। সাম্প্রদায়িক হৃদতা বাড়ানোর জন্য তৃণমূল পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট ও দীর্র্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ না নিলে এ প্রতিরোধ দানা বাঁধবে না। মহিলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চারদলীয় ঐক্যজোটের সন্ত্রাসীদের সহিংস আক্রমণ, অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এসব ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা ও সংখ্যালঘুদের হাহাকারের চিত্র দেখে একাত্তরের হত্যাযজ্ঞের কথা মনে হয়। একাত্তরের মনোবল নিয়ে এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য মহিলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া জাতীয় জনতা পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ(ক-আ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও বিবর্তন সংস্কৃতি কেন্দ্র বিভিন্ন কর্মসূচী ও বিবৃতির মাধ্যমে সংখ্যালঘু নির্যাতনে জড়িত দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার ও বিচার এবং নির্যাতিতদের পুনর্বাসন দাবি করেছে।

দৈনিক জনকন্ঠ, ১৮ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন