গৌরনদী-আগৈলঝাড়া উপজেলায় নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি অঘোষিত শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে। আর তাদের এ শুদ্ধি অভিযানের নামে এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নির্যাতন করা হচ্ছে। ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে মন্দির,অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে বাড়িতে। এখানকার তিন শ’রও বেশী সংখ্যালঘু পরিবার প্রাণ ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। সংখ্যালঘু তরুণীদের অনেকেই স্কুল-কলেজে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। অবাধে চলছে চাঁদাবাজি। আর এ কারনে অনেকেই দোকান পাট খুলছে না। বাড়িঘর ভাংচুর, লুটপাট-এ তো নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দু’উপজেলার চারটি পয়েন্টে বিএনপি কর্মীরা চেকপোস্ট বসিয়েছে। প্রশাসন নীরব । তথ্য প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে। সূত্র গুলো জানায়, এ দু’টি উপজেলার বেশীরভাগ গ্রামের সংখ্যালঘু বাড়ি গুলোতে বুড়োরা ছাড়া আর কেউ নেই। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত পতিহার গ্রামের ১০২টি, বিল্ব গ্রামের ৯০টি, রামানান্দের হাট গ্রামের ১৫টি, চাদশীর ৪০টি, খাঞ্জাপুরের ৩০টি, রাজিহারের ৫০টি, রাস্তাগ্রামের ৩০টি সংখ্যালঘু পরিবার এলাকা ছাড়া। এ দুটি উপজেলা থেকে কোন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন যেন বাইরে বেরুতে না পারে সে জন্য চারটি চেকপোস্ট ব্যাপন করা হয়েছে। গৌরনদীর বাসস্ট্যান্ড, ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ড , মাহিলাড়া বাসস্ট্যান্ড ও নিমতলায় এসব চেকপোস্ট। এসব পয়েন্টে শিকারীর মত ওঁত পেতে থাকে বিএনপি কর্মীরা । কাউকে পেলেই তার উপর হামলে পড়ে। শুক্রবার রাতে চাঁদশী গ্রামে কৃষ্ণকান্ত দে নামের এক যুবলীগ নেতার বাড়িতে বিএনপি ক্যাডাররা হামলা করে। তারা বাড়ির দুর্গা মন্দির ভাংচুর করে এবং বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এ গ্রামের লোকজন এদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। নির্বাচনের দিন থেকেই এ দুটি উপজেলায় সংখ্যালঘু নিপীড়ন শুরু হয়েছে। নির্বাচনের দিনেই আগৈলঝাড়ার বাকাইঠাকুর বাড়ীসহ পাঁচটি বাড়ি হামলা,ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। নির্মীয়মাণ দুর্গা প্রতিমা ভাংচুর করা হয়। এমনকি ঐ বাড়িতে শয্যাশায়ী দক্ষিনাঞ্চলের বিশিষ্ট ও বাকাই হরগোবিন্দ সংকেত মহাবিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ ১০৮ বছরের বৃদ্ধ নিরঞ্জন চক্রবর্তীকে কুপিয়ে আহত করে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গৌরনদীর খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ইল্লা গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী বাবু দত্তের বাড়িতে হামলা করে। তারা ঐ বাড়িতে হামলা,ভাংচুর ও লুটপাট করে। এমনকি তারা এখানকার খ্যাতনামা পল্লি চিকিৎসক পরেশ দত্তকে মারধর করে। পতিহার ইউপি সদস্য অনিমা রাণী নাগের বাড়িতে গত বৃহস্পতিবার হামলা করে বিএনপি কর্মীরা। তারা ঐ বাড়ী ভাংচুর করে এবং অনিমা রাণীকে বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাবার নির্দেশ দেয়। এ ঘটনার পর থেকে অনিমা রাণী এলাকা ছাড়া। পতিহারের জুরান বিশ্বাস, শান্তি বিশ্বাসের বাড়িও ব্যাপক ভাংচুর করা হয়। এ সময় নির্মল মাষ্টার ও শান্তি বিশ্বাসকে বেধড়ক মারধর করা হয়। আগৈলঝাড়ার আব্দুর রব সেরনিয়াবাদ কলেজের শিক্ষক স্বপনের বাড়িতেও নৌকায় ভোট দেয়ার অভিযোগে হামলা ও ভাংচুর করা হয়। বৃহস্পতিবার জঙ্গলপট্টি এলাকার কাপালি সম্প্রদায়ের ২০/২৫টি পরিবারের বাড়িঘর ভাংচুর করে। এসব পরিবারের সদস্যরা এখন বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। রত্নপুর ইউনিয়নের গৌহার গ্রামের বেশ কয়েক সংখ্যালঘু যুবককে মারধর করা হয়েছে। রাজিহার ইউনিয়নের রাজিহার গ্রামে বাবুলাল মুন্সী, মহেন্দ্র ডাক্তার, কমলা রানী, শান্তি রঞ্জন, মন্টু রঞ্জন, ডা. পরেশের বাড়ি হামলা-ভাংচুর করা হয়েছে। এসব হামলায় আহত হয়েছে সুশীল, আনিস, অজিত, ইন্দ্রজিত, মনতোষ। এ তাণ্ডবের পর রাজিহার বাজারের সংখ্যালঘু মালিকানাধীন দোকানগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। বাকাল ইউপি চেয়ারম্যান েজ্যতিন্দ্রনাথ কে লক্ষ্য করে নিক্ষিপ্ত বোমায় আহত হয়েছে জগন্নাথ নামে এক নিরীহ যুবক। বাকালের মেনহাজ ফকিরের নেতৃত্বে সেখানে সন্ত্রাসীরা রামরাজত্ব কায়েম করেছে। গৈলা বাজারের কর্মকার বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করা হয়।
দৈনিক জনকন্ঠ, ৮ অক্টোবর ২০০১