রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আগস্ট মাসে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের ২৩ জন সদস্যকে গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। গত তিন মাসে একে একে রাজধানীর চারটি স্থানে বোমা হামলা করে জঙ্গিরা। তারমধ্যে রাজধানীর মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের পিকআপে বোমা বিস্ফোরন, পল্টন মোড়ে বোমা পেতে রাখা, ফার্মগেট খামার বাড়িতে বোমা পেতে রাখা, গুলিস্থানে পুলিশের পিকআপ লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপে কয়েকজন পুলিশ ও আসার সদস্য আহত হয়ন।

শনিবার ( ৩১ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টায় রাজধানীর সাইন্স ল্যাব মোড়ে পুলিশের পিকআপ লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে জঙ্গিরা। তখন ওইপথ দিয়ে যাচ্ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। বোমা হামলায় তার প্রটোকল সিকিউরিটি এএসআই সাহাবুদ্দিন ও আমিরুল নামে একজন কনস্টেবল গুরুতর আহত হন।

এ বিষয়ে সিটিটিসি এর প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় পুলিশের ওপর হামলা চালানোর প্রস্তুতিকালে পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি মসজিদের পাশের মাঠ থেকে তাদের আটক করা হয়। তারা হচ্ছেন- মোহাম্মদ শিবলী শাহাজাদ ওরফে সাদী, শাহ এম আসাদুল্লাহ মর্তুজা কবীর ওরফে আবাবিল, মাসরিক আহমেদ, আশরাফুল আল আমিন ওরফে তারেক ও এস এম তাসনিম রিফাত। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১০টি ডেটোনেটর ও চারটি গ্যাসের বোতল উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, তারা নব্য জেএমবির (জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের) উলফ প্যাকের সদস্য।এই জঙ্গিরা দেশে-বিদেশের কিছু সন্ত্রাসী সংগঠনের অনলাইন প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালাতে ওই স্থানটিতে একত্রিত হয়েছিল।

গ্রেফতার জঙ্গিদের ব্যবহৃত পাঁচটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। তারা এনক্রিপটেড অ্যাপ সিক্রেট চ্যাটের মাধ্যমে পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করত।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) র‌্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে উগ্রবাদী এই গোষ্ঠী নিজেদের প্রধান নেতা মতিন মেহেদী ওরফে মতিন মাহবুবকে জেল থেকে মুক্ত করতে প্রিজনভ্যানে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। তারা বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক বাহিনীর চাকরিচ্যুত বা অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের নিজেদের দলে ভেড়াতে চেষ্টা করে থাকে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমরানুল হাসান জানান , সংগঠনটিতে সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ঝামেলা এড়াতে বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের টার্গেট করা হয়। এ ক্ষেত্রে তারা পিলখানার ঘটনায় চাকরিচ্যুতদের নিজেদের দলে ভেড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছিল। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতার কারণে তাদের এই চেষ্টা সফল হয়নি বলে জানান র‌্যাব -৩ অধিনায়ক (সিও)।

সম্প্রতি হাতিরঝিল থেকে জঙ্গি সংগঠন আল্লাহর দলের ভারপ্রাপ্ত আমির ইব্রাহিম আহমেদ হিরোসহ (৪৬) চার সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন- গাইবান্ধার আবদুল আজিজ (৫০), পাবনার শফিকুল ইসলাম সুরুজ (৩৮), কুড়িগ্রামের রশিদুল ইসলাম (২৮)। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু মোবাইল সিম ও ফোন সেট, পেনড্রাইভ ও হার্ডড্রাইভ উদ্ধার করা হয়।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ বলেন, সাধারণত যাদের সহজেই উগ্রপন্থি বানানো সম্ভব, তাদের দিকেই নজর থাকে জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলোর। দেশে প্রথমে মাদ্রাসা এবং পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের শিকার হয়েছে। ওইসব ক্ষেত্রে সবাই এখন অনেক সচেতন বলে শিকার বদলাতে বাধ্য হয়েছে জঙ্গিরা। এখন তাদের টার্গেটে (লক্ষ্যে) আছে, যাদের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছে তারা। তাদের দলে ভেড়ানো সহজ মনে করছে জঙ্গিগোষ্ঠী।

র‌্যাব বলেছে, আগস্টে ২৩ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭ জন জেএমবি, ৬ জন আনসার আল ইসলাম, ২ জন হিযবুত তাহরীর ও ৮ জন আল্লাহর দলের সদস্য। তাদের ঢাকা থেকে ১৮, যশোর থেকে ২, টাঙ্গাইল থেকে ১, বরিশাল থেকে ১ এবং মাদারীপুর থেকে ১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

পুলিশকে টার্গেট করে বোমা হামলার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, গত ২৯ এপ্রিল ঢাকার গুলিস্তানে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা (আইইডি) নিক্ষেপ করা হয়। এরপর ২৬ মে রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে সময় নিয়ন্ত্রিত বোমা বিস্ফোরিত হয়। গত ২৩ জুলাই রাতে রাজধানীর পল্টন ও খামারবাড়ী এলাকায় দুইটি পুলিশ বক্সের কাছে দুটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধারের পর নিষ্ক্রিয় করা হয়। সবশেষ নিউমার্কেট সাইন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে পুলিশের ওপর বোমা নিক্ষেপে ২ পুলিশ সদস্য আহত হন। তবে এ সকল ঘটনায় জড়িত কোনও জঙ্গিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এই চারটি ঘটনারই দায় স্বীকার করেছে আইএস।

তবে সরকার বা পুলিশ বলেছে, এরা দেশে বেড়ে ওঠা জঙ্গি। এ সকল জঙ্গির মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। এরা ঘুরে দাঁড়িয়ে বড় ধরনের হামলার শক্তি নেই। তারপরও আমরা বিষয়টি উঁড়িয়ে দিচ্ছি না। সম্ভাব্য হামলা মোকাবেলায় বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে ব্যক্তিগত সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

দৈনিক জাগরণ

মন্তব্য করুন