চাঁদপুরের কচুয়ায় সাইট পরিদর্শনে গিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান শিশিরের হামলার শিকার হয়েছেন শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নূর আলম। মারধরের পর তাকে স্থানীয় হাসপাতালে যেতেও বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ওই প্রকৌশলী।

 

রবিবার (১৯ জুলাই) দুপুরে উপজেলা পরিষদ এলাকায় কচুয়া শহীদ স্মৃতি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ৬ তলা ভবনের কাজ পরিদর্শনে গেলে কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতেই এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, চাঁদপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কচুয়া শহীদ স্মৃতি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’-এর ৬ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ভবনের এক তলার ছাদ ঢালাই কাজ শেষ হয়েছে। নতুন করে কাজ করতে ঠিকাদার আবার নির্মাণ সামগ্রী আনেন। ওই নির্মাণ সামগ্রীর মান যাচাই করতে যান কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপায়ন দাস শুভ ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী নূর আলম। সেখানে গিয়ে প্রকৌশলী ও ইউএনও নির্মাণ সামগ্রী যাচাই করছিলেন। হঠাৎ করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির তার লোকজন নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়।
হামলার শিকার উপ-সহকারী প্রকৌশলী নূর আলম বলেন, ‘দু’দিন আগে কচুয়া শহীদ স্মৃতি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের কাজের জন্য কিছু পাথর আসে। ওই পাথরগুলোর বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ আসে। যদি পাথরের মান ভালো না হয়, তাহলে রিজেক্ট করে দেবো এবং ঠিকাদারকে পাথরগুলো ফেরত নিয়ে যেতে বলবো। এছাড়া ওই সাইট থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান কয়েক বস্তা সিমেন্ট চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে সিমেন্ট না দেওয়ায় তিনি উত্তেজিত হয়ে দু’ দিন আগে সাইট বন্ধ করে দেন। পরে আমরা খবর পেয়ে সাইট পরিদর্শনে যাই। সেখানে গিয়ে পাথরগুলো যাচাই করছি, এমন সময় হঠাৎ করে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির কোনও কথা না বলেই হামলা চালায়। প্রথমে ইউএনও সাহেবের ওপর হামলা চালাতে গেলে তিনি মুখের মাস্ক খুললে তাকে না মেরে আমার ওপর হামলা চালায় এবং তার লোকজন দিয়ে আমাকে মারধর করে। এসময় চেয়ারম্যান বলেন, ‘দড়ি আন, তাকে বেঁধে রাখবো’। পাশে থাকা লোকজন বলেন, তিনি তো প্রকৌশলী, তাকে মারছেন কেন? তখন চেয়ারম্যান তাদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতে থাকে। আবারও আমাকে বাঁশ দিয়ে মারধর করে। পরে আমি কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে চাইলে কয়েকজন লোক বাধা দেয়। পরবর্তীতে আমি চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেই। বিষয়টি আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ন কাজ তথা সাইট ভিজিট করা আমার দায়িত্ব। আমি সে কাজটি করতে গিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের হামলার শিকার হলাম।’

ইউএনও দীপায়ন দাস শুভ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি সরকারের উন্নয়ন কাজ পরিদর্শনে যাই। এ সময় ওই প্রকৌশলীও ছিলেন। সেখানে যাওয়ার পরে উপজেলা চেয়ারম্যান এসে সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে অ্যাসোল্ট করেছেন। ঘটনার সময় তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন।’
চাঁদপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী ফাহিম ইকবাল বলেন, ‘উপ-সহকারী প্রকৌশলী নূর আলমের মাধ্যমে ঘটনাটি আমাকে ফোনে জানিয়েছেন। বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিক ইউএনও’র কাছে জানি এবং ঘটনার সত্যতা পাই। পরে বিষয়টি চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

বাংলা ট্রিবিউন

মন্তব্য করুন