চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে সনাতন ধর্মের শিক্ষাথীদের গরুর মাংসের বিরিয়ানি খাওয়ানো হয়েছে। এমন অভিযোগ তুলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রফিকুল আমিন কাজলের বিচার চেয়ে ২১ নভেম্বর রোববার উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যৌথ স্বাক্ষর দিয়ে জেলা প্রশাসক ও ফরিদগঞ্জের ইউএনও এর কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে। এ নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করতে দেখা যায়।
ঘটনাটি ঘটেছে, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার এআর পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে। বিষয়টি যাতে প্রকাশ না পায় সেজন্য একটি মহল তা গোপন রাখার চেষ্টা করা হলেও ২২ নভেম্বর সোমবার সাংবাদিকদের হাতে ওই অভিযোগের কপি চলে আসে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানায়, চলতি মাসের গত ১১ নভেম্বর বিদ্যালয়ের এসএসসি পরিক্ষাথীদের বিদায় উপলক্ষে অনুষ্ঠিত মিলাদ মাহফিলে গরু ও মুরগী দিয়ে দুই ধরনের বিরিয়ানির ব্যবস্থা থাকলেও বিতরণকালে উপস্থিত হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদেরকে গরুর মাংসের বিরিয়ানি দেয়া হয়েছিল। না বুঝে ক্ষুধার তাড়নায় কজন হিন্দু শিক্ষাথী তাৎক্ষনিক গরুর মাংসের বিরিয়ানি খেয়ে ফেলে। আবার যারা বুঝতে পেরেছে তারা ওই প্যাকেট ফেরত দেয়।
এ বিষয়ে কয়েকজন হিন্দু শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষককে জানালে তিনি তাৎক্ষণিক শিক্ষার্থীদেরকে বলেন, আজকাল অনেক হিন্দুরাই গরুর মাংস খায়। তোমরা খেয়েছো তাতে কি হয়েছে। বাড়িতে এসে হিন্দু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের কাছে এমন কটাক্ষমূলক বক্তব্য শুনে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে তারা।
গরুর মাংসের বিরিয়ানি প্যাকেট বিলি করা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই বলে উল্লেখ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের স্থানীয় নের্তৃবৃন্দরা জানায়, শিক্ষার্থীরা বিতরনের সময় ভুল করতেই পারে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজল যে বক্তব্য দিয়েছে তা হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি অযাচিত এবং দৃষ্টতা প্রদর্শন ছাড়া আর কিছু নয়।
প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজল ২১ নভেম্বর সোমবার এ সংবাদদাতাতে বলেন, ঘটনার ৪ দিন পর একজন শিক্ষার্থী আমার কাছে এসে ওই বিষয়ে জানালে আমি সান্ত্বনাস্বরূপ তাকে বলেছি যে, ভুলেই যখন গরুর মাংসের বিরিয়ানি খেয়েই ফেলেছো এখন করার কি আছে। আমার এই বক্তব্য কি অপরাধ হয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ঘটনার জন্য স্কুলের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে প্রধান শিক্ষকের বিচার চেয়ে ঘটনার ১০দিন পর ফরিদগঞ্জ উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সভাপতি ডাঃ পরেশ চন্দ্র পাল, সাধারণ সম্পাদক তপন চন্দ্র মজুমদার ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি হিতেশ চন্দ্র শর্মা ও সাধারন সম্পাদক লিটুন কুমার দাস যৌথ স্বাক্ষর দিয়ে গত রোববার জেলা প্রশাসক ও ফরিদগঞ্জের ইউএনও বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইউএনও শিউলী হরি গতকাল দুপুরে তার কার্যালয়ে গেলে এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমি ছুটিতে ছিলাম । আমার হাতে উক্ত বিষয়ে এখনো কোন অভিযোগ আসেনি।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ডাক্তার পরেশ চন্দ্র পাল বলেন, ঘটনাটি আমি এলাকার এমপি মহোদয় মোঃ শফিকুর রহমানকে জানিয়েছি। তিনিও এ বিষয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় থাকা আমাদের ফরিদগঞ্জে উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।