নির্বাচনোত্তর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বর্তমানে কমলেও নড়াইলের কালিয়ার বিভিন্ন গ্রামে সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক অবস্থা এখনো কাটেনি। এলাকার সংখ্যালঘু প্রধান কয়েকটি গ্রামের ছাত্রীরা স্কুল-কলেজে যাচ্ছে না। কেউ কেউ স্কুল পড়ুয়া মেয়েদের ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ জোট সরকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুললেও বিএনপি বলেছে, অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। পুলিশ বলেছে, নির্বাচনের পর কিছু ঘটনা ঘটলেও এখন তা নেই। সরজমিন নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, কালিয়া শহরে রাজনৈতিক সহিংসতা অবস্থাহত রয়েছে তবে গ্রামাঞ্চলে অবস্থা উন্নতির দিকে। স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্ববৃন্দের দ্রুত হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি অনেকটা সামাল দেওয়া গেলেও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ব্যাপারে কোন আস্থা সৃষ্টি হয়নি। কালিয়ার চালনা, হরিশপুর, কাশীপুর, লক্ষীপুর প্রভৃতি এলাকার সংখ্যালঘুরা এখনও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। নড়াইল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে চালনা গ্রামের অবস্থান। ভুক্তভোগীরা জানান, অনেকের জমি থেকে ধান কেটে নিয়েছে সন্ত্রাসীরা, অন্যান্য ফসলও কেটে নিয়েছে তারা। ৩টি চিংড়ি মাছের ঘের লুট হয়েছে। দুজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। নৌকা সমর্থক সংখ্যালঘুর ওপর চাঁদা ধার্য হয়েছে, যা পরিশোধ করে তারা গ্রামে থাকার সুযোগ পেয়েছে। এ গ্রামে রয়েছে ৯০০ ভোটার। সত্তর বছর বয়সী জ্ঞানেন্দ্র চিন্তাপাত্র জানান, নির্বাচনের পর এমন ঘটনা জীবনে কখনো দেখিনি। কালিয়া কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র দুর্জয় বিশ্বাস জানান, সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে তিনি কলেজ যেতে সাহস পাচ্ছেন না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব কর্মকাণ্ডের হোতা এলাকার বিএনপির সন্ত্রাসী জিল্লুর রহমান। চালনা গ্রামের ২০/২৫ জন ছাত্রী স্কুলে যেতে পারছে না। যাদের মধ্যে রয়েছে, দুলালী (৮ম শ্রেণী), দীপালি (৯ম শ্রেণী), চম্পা (৯ম শ্রেণী), শম্পা, সবিতা, সীমা মজুমদার, লিপিকা প্রমুখ। কালিয়া গালর্স স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্রী রত্না জানায়, স্কুলে যেতে না পারায় এবার টেস্ট পরীক্ষা দিতে পারেনি। সে নিশ্চিত নয়, এ বছরে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ সে পাবে কিনা। নিরাপত্তাজনিত কারণে এই গ্রাম থেকে ৮/১০টি মেয়েকে ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে খোঁজ পাওয়া গেছে। কি কারণে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে জানতে চাইলে এই গ্রামের উপানান্দ চিন্তাপাত্র বলেন, আমরা গ্রামের প্রায় ১৬ আনা ভোটারই শেখ হাসিনাকে ভোট দিয়েছি। তাই আমাদের তাড়ানোর জন্য তারা এসব করছে। এভাবে চললে দেশে থাকা সম্ভব নয়। আমরা নিরাপত্তা চাই। নইলে ভিটে মাটি বিক্রি করে চলে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। এ ব্যাপারে কালিয়া শহরের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন কুমার ঘোষ জানান, নির্বাচনের পর চালনায় ৩টি ঘটনা ঘটেছে। শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় এলাকায় ‘সমন্বয় কমিটি’ গঠিত হয়েছে। তিনি জানান, সংখ্যালঘুরা সবসময় চাপের মুখে থাকেন। নির্বাচনের বিষয়টি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয়। কালিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা অভিজিত চৌধূরী বলেন, নির্বাচনোত্তর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে সেজন্য স্থানীয় নেতৃত্ববৃন্দসহ বিভিন্ন এলাকা সফর করেছি। কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিয়াকত হোসেন বলেন, যে কোন ঘটনা জানার পরই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলেও তিনি দাবি করেন।
ভোরের কাগজ, ৩ ডিসেম্বর ২০০১