নীলফামারীর পল্লীতে সংখ্যালঘু পরিবারের হরিপদ রায় ঠাকুরের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলায় বাড়িঘর ভাংচুর এবং বৃদ্ধ মহিলাসহ বেধড়ক পিটিয়ে ১০ নারী-পুরুষকে আহত করা হয়। আহতদের মধ্যে তিনজনকে গুরুতর অবস্থায় নীলফামারী আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরা হলেন হরিপদ রায় ঠাকুরের পুত্র রবিমন্যু রায় (৪৫), পুত্রবধূ প্রমিলা (৩৫) এবং নাতি বৃন্দাবন (২০)। অন্য আহতরা হলো বীনা রানী (৬৫), বিন্দু বালা (৭০), পান বালা (২৮), স্বরাধ্বিনী (৩৫), রাজ বিহারী (৩৮), ধীরেন্দ্র (বাঁশি)(৪০), যশোদা (৩০)। এদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকার সংখ্যালঘু পরিবারগুলো আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলায় থানায় মামলা করা যাচ্ছে না। একাধিক সূত্র জানায়, এই হামলার ঘটনার মূল নায়ক জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাহিদুল (৪৫) ও তার দলবল স্পষ্টভাবেই বলে যায়, নৌকা মার্কায় ভোট দেবার মজা এবার বুঝিয়ে দেয়া হবে। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার দুপুরে রামনগর ইউনিয়নের উত্তর রামনগর বাবুপাড়া গ্রামে। বুধবার সরেজমিন ওই গ্রামে গিয়ে জানা যায়, জাহিদুলসহ রশিদুল, সফিকুল, মকছুদুল, সাত্তার, সোলেমান ও ঝিলোসহ আরও অনেকে দা, কুড়াল, লাঠি নিয়ে হরিপদ রায় ঠাকুরের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা বাড়ির বেড়া, চাটাই ভেঙ্গে ফেলে এলোপাতাড়িভাবে নারী-পুরুষকে বেধড়ক পিটাতে থাকে। এতে রবিমন্যু রায় (৪৫) ও বৃন্দাবন (২০)-এর মাথা ফেটে যায়। এছাড়া প্রমিলার (৩৫) কোমরে লাথি ও বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত করায় তার অবস্থা আসশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। তাদের আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্য ৭ আহত প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। এদিকে হামলাকারীরা প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে, এখন আর শেখ হাসিনার সরকার নেই। এসব হিন্দুকে এখন বাড়ি ভিটা থেকে বিতাড়িত করে ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের গালাগালি দেয়া হয়। অপরদিকে জাহিদুল মেম্বারের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ভাতিজা নূরুজ্জামান (২৫) এক প্রকার ধমকের সুরে বলেন, এবার বেটাদের দেখে নেয়া হবে। এ ঘটনায় এলাকার সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলা ও হুমকির কারণে এ জেলায় শারদীয় দুর্গাপূজা উদ্যাপনের ব্যাপারটি এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে বলে জানা গেছে।
দৈনিক জনকন্ঠ, ১৯ অক্টোবর ২০০১