ময়মনসিংহে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক বৃদ্ধকে জুতার মালা পরানো হয়েছে। তাছাড়া তাকে কাফের ঘোষণা করে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তার স্ত্রীর তালাক হয়ে গেছে বলে ফতোয়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

 

১২ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার দাওগাঁও ইউনিয়নের শুকপাটুলী গ্রামের আকবর আলীকে (৬৫) এক সালিশে এই সাজা দেওয়া হয়।

শুকপাটুলী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো. ওয়ালিউল্লাহ বলেন, “ওই শালিসে হাজার হাজার মানুষ ছিল। সবাই ওই বৃদ্ধের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল। তাই তার পরিবারকেই বিচারের দায়িত্ব দিলে তারা বৃদ্ধকে জুতার মালা পরান।”

শাস্তি দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন শুকপাটুলী মসজিদের ইমাম মকবুল হোসেনও।

তিনি বলেন, “কোরআন অবমাননা করায় তওবা করিয়ে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে তাকে জুতার মালা পরানো হয়েছে। তবে তাকে শারীরিক কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি।”

তবে আকবর আলীর স্ত্রী অজুফা খাতুন অভিযোগ করেন, “শালিসে আমার স্বামীকে জুতার মালা পরিয়ে তিন মাস ১০ দিনের জন্য গ্রাম ছাড়া করার সিদ্ধান্ত দেন মাতব্বররা।

“স্বামীকে কাফের ফতোয়া দিয়ে আমার তালাক হয়ে গেছে বলেও ফতোয়া দেওয়া হয়। আমাদের আবার বিয়ে করতে হবে বলেও ফতোয়া দেন তারা। আমার স্বামী অন্যায় করেছে। দেশে আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। এভাবে অপদস্থ করার বিচার দাবি করছি আমি।”

তবে তালাক হয়ে গেছে বলে ফতোয়া দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন শিক্ষক মো. ওয়ালিউল্লাহ ও ইমাম মকবুল হোসেন।

শালিসে ইমাম মকবুল হোসেন, শিক্ষক ওয়ালিউল্লাহ, মসজিদ কমিটির সভাপতি ও শুকপাটুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক রমজান আলী মাস্টার, বটতলা মসজিদের ইমাম আব্দুর রহমান, শুকপাটুলী দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা কুতুব উদ্দিন সালিশে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান অজুফা খাতুন।

‘ধর্ম অবমামনার’ ঘটনা সম্পর্কে অজুফা বলেন, “আমার বড় মেয়ে আমার ছোট জামাতা মঞ্জুরুল হকের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার নেয়। এ নিয়ে তাদের মাঝে ঝগড়া চলে আসছে। মঞ্জুরুল গত সোমবার ১০-১২ জন লোক নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে। তারা আমার বৃদ্ধ স্বামী আকবর আলীর কাছে টাকা লেনদেনের বিষয়টি জানতে চায়। আকবর টাকা লেনদেনের বিষয়ে কিছু জানে বললে তারা তাকে চাপাচাপি করে। এতে আকবর ক্ষুব্ধ হয়ে ঘর থেকে কোরান শরিফ এনে মাটিতে ফেলে তার ওপর পা রেখে টাকা লেনদেনের বিষয়ে জানে না বলে জানায়।”
শাস্তি দেওয়ার বিষয়ে রমজান আলী মাস্টার বলেন, “এলাকার লোকজন ওই বৃদ্ধের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তাকে বাঁচাতেই এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তবে তাকে গ্রাম ছাড়া করা হয়নি। তাকে কিছুদিন পালিয়ে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”

তালাক হয়ে গেছে এমন ফতোয়া দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আব্দুল হেকিম ঘটনা শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি ‘অসুস্থতার কারণে’ শালিসে যেতে পারেননি বলে জানান।

এসব বিষয়ে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি বলে জানিয়েছেন মুক্তাগাছা থানার ওসি মাহমুদুল হাসান।

তিনি বলেন, “অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

মন্তব্য করুন