কেন্দ্রের আহ্বান সত্ত্বেও মাঠপর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘুদের ওপর বিএনপি-জামায়াতের নির্যাতন হামলা বন্ধ হয়নি। সারা দেশ থেকেই বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, লুটপাট, বাড়ি থেকে বের করে দেয়া, শারীরিক নির্যাতন এমনকি ধর্ষণের অভিযোগ আসছে। এ সবের বিরুদ্ধে দেশের কোথাও প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে বলে শোনা যায়নি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ প্রার্থীই এলাকা ছেড়ে রাজধানীতে চলে এসেছেন। এ কারণে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতেও সাহস পাচ্ছে না। নির্যাতন, লুটপাট, ভাংচুরের প্রক্রিয়া শুরু হয় নির্বাচনের পর দিন থেকেই। কোন কোন এলাকায় এসব ঘটনা ঘটছে বিএনপি-জামায়াতের বিজয়ী বা পরাজিত প্রার্থীদের সরাসরি নির্দেশে। কোন কোন এলাকায় সন্ত্রাস করছে মাঠ পর্যায়ের বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা নিজ দায়িত্বে। তাদের সামনে লক্ষ্য নির্ধারণ করাও সহজ। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাধারণত সারা দেশেই চিহ্নিত। তার ওপর সংখ্যালঘুদের চিহ্নিত করতে কোন সমস্যাই হয় না। বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা দিনের বেলা এদের বাড়ি যাচ্ছে। কারও ওপর চাঁদা ধার্য করা হচ্ছে। এমনকি কোন কোন পরিবারে যুবতী মেয়েদেরও দাবী করা হয়। না পেলে রাতের বেলা এসে শুরু হয় লুটপাট, মারধর ও ধর্ষণ। বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ, রামপাল, মোল্লাহাটে এমন ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সদস্য আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ সোমবার তার এলাকায় এক সঙ্গে মা মেয়ে ধর্ষিত হবারও অভিযোগ করেছেন সারা দেশের অধিকাংশ এলাকায় এসব ঘটনা ঘটলেও অনেক এলাকায় অভিযোগ করার পর্যন্ত পরিবেশ নেই। কেউ মুখ ফুটে বললে তার উপর নেমে আসছে দুর্যোগ। অনেক ক্ষেত্রে তাদের অভিযোগ তো দূরের কথা পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট পর্যন্ত— তারা অস্বীকার করে বিবৃতি দিচ্ছেন। সম্প্রতি খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা তাদের উপর নির্যাতনের খবরের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে হিন্দু নেতারা জানিয়েছেন, একই কারণে তারা বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে তাকে শ্বাগত জানানো এবং পূজার নিমন্ত্রণ করতে বাধ্য হয়েছেন। নির্বাচনের পরদিন চারদলীয় জোট নেত্রী খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বা সংখ্যালঘুদের ওপর কোন প্রকার হামলা, নির্যাতন না করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিএনপির মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া হামলাকারীদের গ্রেফতার করার জন্য পুলিশের আইজিপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পরে জোটের অন্তর্ভুক্ত চার দলের মহাসচিব সম্মিলিতভাবে এসব হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। এত কিছুর পরও ফল কিছু হয়নি। সন্ত্রাস, হামলা, লুটপাট, ধর্ষণ, বাড়িঘর তছনছ অব্যাহত রয়েছে। এদিকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর আসছে, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি থাকার পরও কৌশলের কারণে তাদের মার খেতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দলের প্রার্থীরা মাঠ ছেড়ে দিয়ে রাজধানীতে চলে এসেছেন। নির্বাচনের দু’দিন পর ঢাকায় শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের কথা বলে এসেছেন আর ফেরত যাননি। নেতৃত্বের অভাবে দলের কর্মীরা অসহায় বোধ করছে। পাল্টা আঘাত করার শক্তি থাকলেও সিদ্ধান্তের অভাবে করতে পারছেনা। তার উপর রয়েছে প্রশাসনের ন্যাক্কারজনক পক্ষপাতিত্ব। সারা দেশ থেকে সন্ত্রাসের খবর এলেও প্রশাসন কোন জায়গায় ব্যবস্থা নিয়েছে এমন খবর পাওয়া যায়নি। বরং প্রশাসনের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছে। অনেক এলাকায় ঘটছে উল্টো ঘটনা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ফিরে দাঁড়ালে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে। বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে আওয়ামী লীগের উপর।

দৈনিক জনকন্ঠ, ৯ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন