নর্বাচনোত্তর সহিংসতা এবং নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার হয়ে বরিশাল, বাগেরহাট, পিরোজপুর জেলার গৌরনদী, উজিরপুর, আগৈলঝাড়া, মোল্লাহাট, চিতলমারী, নাজিরপুর উপজেলার প্রায় ১৫ হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থক ও সংখ্যালঘু নারী, পুরুষ বাড়ি ছেড়ে কোটালীপাড়া উপজেলার রামশীল ইউনিয়ন ও বিভিন্ন স্থানে এসে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। রামশীল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রিত এসব লোক এখন অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে আশ্রয় গ্রহণকারীরা তাদের ওপর হামলা, নির্যাতন,বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ,ভাংচুর ও লুটপাটের বর্ণনা দেন। সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার কারণে গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী, বার্থি, বাহাদুরপুর, পিংগলাকাঠি, আশোককাঠি, টরকিবন্দর, আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল, রাজিহার, বাগদা, কোদাল ধোয়া, উজিরপুর উপজেলার গুড়িয়া, উত্তর মাদারকাঠি, চিতলমারীর খৈড়াবুনিয়া, কালীগঞ্জ, আড়য়াঢেকি, মাছুয়ারকুল, নারথা বড়ঘাট, মোল্লাহাট উপজেলার গাওলা, গুড়িগাতি, কেন্দুয়া, চাঁদেরহাট, নগরকান্দিসহ সর্বত্র ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, চক্ষু উৎপাটন, লুটপাট ও চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা এসব অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। থানাকে অবহতি করা হলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি। সাংবাদিক সম্মেলনে নেতৃত্ববৃন্দ বলেন, গৌরনদী উপজেলার উত্তর চাঁদশী গ্রামের একটি সংখ্যালঘু পরিবারের মা-মেয়েসহ ৩ জনকে জনসম্মুখে ধর্ষণ শেষে পরিবারের মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। বাটাজোড় ইউনিয়নের বাছার গ্রামের একটি পরিবারের তিনটি মেয়েকেও মা-বাবার সামনে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। সোমবার রাতে বরিশালের চারদলীয় ঐক্য জোটের সমর্থকরা রামশীল ত্রিমোহনা বাজারে আশ্রিতদের ওপর হামলা করতে ট্রলারে করে এলে গ্রামবাসী তাদের ধাওয়া দিয়ে বের করে দেয়। আগৈলঝাড়ার কোদালধোয়া গ্রামে সন্ত্রাসীরা খোকন পাণ্ডে, ডা.সুধীর, মহানন্দ শীল, মনি মোহন শীল, ক্ষুদিরাম, জয়ধরসহ আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দোকান ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে । সোমবার রাতে ঐ উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামে সুনীল ডাক্তারের বাড়িতে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে মন্দিরের মূর্তিসহ বাড়িঘরে ব্যাপক ভাংচুর করে। কোটালীপাড়া উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঘুরে দেখা গেছে, আশ্রিতরা পরিবার-পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা বিভিন্ন রাস্তা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে খোলা আকাশের নিচে রান্নাবান্না করে খাচ্ছেন এবং তাদের ভয়-ভীতি এখনও কাটেনি। রামশীলে আশ্রয়গ্রহণকারীদের মধ্যে দেখা যায় শোকের ছায়া। কেউ কেউ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সবাই বাড়িঘরে ফিরে যেতে উদগ্রীব। আগৈলঝাড়ার কার্তিক দে জানান, তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে, পুকুরের এক লাখ টাকার মাছ লুটে নিয়েছে, পরিবারের সবাইকে মারধর করেছে। তারা প্রাণ বাঁচাতে এলাকা ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে কোটালীপাড়ায়। সাংবাদিক সম্মেলনে নারকীয় এসব ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার, নিরাপত্তা বিধান, খাদ্য ও ঘরে ফেরার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। অবিলম্বে তাদের জন্য লঙ্গরখানার ব্যবস্থা করা না হলে তারা খাদ্যাভাবের শিকার হয়ে পড়বেন বলে আশংকা করা হচ্ছে।

যুগান্তর, ১০ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন