আদিবাসী নারীরা পাঁচটি ধাপে বৈষম্যের শিকার হয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে গত রবিবার (১৪ মার্চ) রাজধানীর ওয়াইডব্লিউসিএ হলকক্ষে করোনাকালে ‘সমভবিষ্যৎ প্রতিষ্ঠায় নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করি’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও কাপেং ফাউন্ডেশন এই আলোচনার আয়োজন করে।

 

আলোচনায় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, আদিবাসীরা পৃথিবীর জন্য, পৃথিবীর মানুষের জন্য, পৃথিবীকে বসবাসযোগ্য করে তোলার জন্য পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই আদিবাসী মানুষদের মৌলিক অধিকারকেও খর্ব করে দেওয়া হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আইনুন নাহার বলেন, পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নারী হচ্ছে ফুটনোটের মতো, যেখানে আদিবাসী নারীরা ফুটনোটের ফুটনোট। বিশ্বব্যাপী নারীদের মধ্যে যেমন সাদৃশ্য রয়েছে, তেমনি ভিন্নতাও রয়েছে। আমাদের সেই ভিন্নতাকে বুঝতে হবে। তিনি বলেন, মূলধারা নারী আন্দোলন এখনো আদিবাসী নারী আন্দোলনকে নৈকট্যে আনতে পারেনি।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ ডেপুটি ডিরেক্টর নীনা গোস্বামী বলেন, ব্যবস্থাপনার কৌশল নারীর সহজাত বৈশিষ্ট্য। সমস্যা হলো নারীর এই সক্ষমতা নিয়ে নেতৃত্বে আসতে না দেওয়া, অংশীদারত্বের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীকে অগ্রাধিকার না দেওয়াই পুরুষতন্ত্রের সমস্যা।

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের উপপরিচালক শাহনাজ সুমী জাতিসংঘের মহাসচিবের মন্তব্য উল্লেখ করে বলেন, শুধু মহামারি নয়, নারীরা এর চেয়েও অনেক কিছুই ব্যবস্থাপনা করতে সক্ষম।

গত বছর লাকিংমে চাকমার সঙ্গে নৃশংস ঘটনার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসি বিভাগের পরিচালক জনা গোস্বামী বলেন, আদিবাসী নারীদের জোরপূর্বক অপহরণ, ধর্মান্তকরণ করে বিয়ে করা ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা করা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এত বছর পরও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত হয়নি।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে ফাল্গুনী ত্রিপুরা আদিবাসী নারী নেতৃত্বের গুরুত্ব, আদিবাসী নারীদের সহিংসতার শিকার হওয়ার কারণ রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যগুলো তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য হেলেনা তালাং-এর সঞ্চালনায় এবং নেটওয়ার্কের সদস্যসচিব চঞ্চনা চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আদিবাসী যুব ফোরামের প্রতিনিধি চন্দ্রা ত্রিপুরা। মুক্ত আলোচনায় হেবাংয়ের প্রতিনিধি সুচিন্তা চাকমা, নারী উদ্যোক্তা চেতনা চাকমা, বাংলাদেশ গারো বিউটি পার্লার ওনার্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটির প্রেসিডেন্ট স্বপ্না আজিম ও হেলি চাকমা অংশ নেন।

আদিবাসী নিউজ

মন্তব্য করুন