দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যাংক গুলো থেকে সংখ্যালঘুরা টাকা তুলে নিচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে টাকা তোলার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি একই কারণে অনেকে দেশ ত্যাগ করছেন। ইতোমধ্যে দেশ ত্যাগের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ১শ’ ৭০জন সংখ্যালঘুকে আটক করেছে। অনেকে দেশ ত্যাগের জন্য ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। টাকা তোলার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকের লেনদেন হ্রাস পেয়েছে। গত এক সপ্তাহ থেকে এ ঘটনা ঘটছে। ব্যাংক কর্মকর্তা ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃত্ববৃন্দের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। নির্বাচনের পর এই অঞ্চলের বাগেরহাট, মাগুরা, ঝিনাইদহ, যশোর জেলার বিভিন্ন গ্রামে সন্ত্রাসী চক্র সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা শুরু করে। অব্যাহত সন্ত্রাসী ঘটনায় অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসের প্রভাব অর্থনীতির ওপরও আঘাত করে। ব্যাংকে লেনদেন হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য আর্থিক লেনদেনও কমে যায়। ব্যবসা বানিজ্যে মন্দাভাব দেখা দেয়। এই অঞ্চলের কয়েকটি বেসরকারী ব্যাংকের ব্যাবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লেনদেন নির্বাচনের আগের সময়ের চেয়ে অর্ধেক নেমে এসেছে। আতঙ্কগ্রস্থ মানুষ নিজের কাছে রাখার জন্য ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘুরা তাদের সঞ্চয়ী আমানতের টাকা তুলে নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যশোরের একজন ব্যাংক ব্যবস্থাপক বলেন, আগে প্রতিদিন তাঁর ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকা লেনদেন হলেও এখন গড়ে ২৫/৩০ লাখ টাকা প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে। তিনি স্বীকার করেন, তাঁর ব্যাংক থেকে সংখ্যালঘুরা টাকা তুলে নিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর সন্ত্রাসের ঘটনা প্রচার হওয়ার কারণে টাকা তুলে নেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংখ্যালঘু বড় ব্যবসায়ীরা বানিজ্যিক লেনদেন থেকে বিরত রয়েছে। এ ঘটনার পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেক সংখ্যালঘু এলাকা ছেড়ে ভারতসহ দেশের মধ্যে নিরাপদ এলাকায় চলে যাচ্ছে। গত ১১ অক্টোবর ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমার ঠাকুরনগর এলাকা থেকে সে দেশের পুলিশ ৮৮ জন বাংলাদেশীকে আটক করে। এদের মধ্যে নারী-শিশুও রয়েছে। এরা নির্বাচনের পর সহিংস ঘটনায় দেশ ত্যাগ করেছিল। গত ১৩ অক্টোবর দেশ ত্যাগ করার সময় বিডিআর সাতক্ষীরার ভাদিয়ালী ও ভোমরা সীমান্ত থেকে ৮২ জনকে আটক করে। জানা যায়, নিরাপত্তাহীনতার কারণে এরা অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছিল । এ ব্যাপারে খবর নিয়ে আরও জানা যায়, নড়াইলের কালিয়া উপজেলার গাজিরহাট, জয়পুর, নিন্দিপুর, পাড়াগাতি, জয়নগর, পিরলী, লক্ষীপুর, ঝিনাইদহের বাদুরগাছা, তত্তিপুর, ঠিকদানা, বাগেরহাটের কচুয়ার মুখিয়া, শিকদার মল্লিক, আন্ধার মানিক, শ্যামপুকুরিয়া সহ আরও কিছু গ্রামের অনেক সংখ্যালঘু অব্যাহত সন্ত্রাসের কারণে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ ভারতে চলে গেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

দৈনিক জনকন্ঠ, ১৬ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন