গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের জে. এম সেন হল মিলনায়তনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তিন জেলা কমিটির বর্ধিত সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা লুটপাট, নারী ধর্ষণ ও হত্যা-নির্যাতন অব্যাহত থাকায় গভীর উৎকন্ঠা প্রকাশ করা হয় এবং এর বিরুদ্ধে জনমত গঠনসহ মাঠের আন্দোলনকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে প্রত্যেক থানা সদরে স্মারকলিপি পেশ ও ১৬ অক্টোবর মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে মানববন্ধনের কর্মসুচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রবীণ বিপ্লবী ও সাবেক আইন পরিষদ সদস্য বিনোদ বিহারী চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রায় ৫শ বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ১০ ঘন্টা (সকাল ৯টা থেকে সন্ধা ৭টা) স্থায়ী এই বর্ধিত সভায় দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস-নির্যাতন প্রশ্নে বিদায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ গোষ্ঠির তাণ্ডব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ এনে ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণ আদায়কল্পে মামলাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় এই উদ্দেশ্যে একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার বিভিন্ন থানা এলাকার সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বর্ণনা তুলে ধরা হয় গতকালের বর্ধিত সভায়। সভায় আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ রাজনৈতিক শক্তির প্রতারণাপূর্ণ কার্যক্রমে ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয় যে, প্রধান রাজনৈতিক শক্তিসমূহ চাকরি, নিয়োগ, শিক্ষাক্ষেত্রসহ রাষ্ট্রীয় ও জীবনের সর্বক্ষেত্রে জনসংখ্যা অনুপাতে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর কোটা সংরক্ষণের ব্যাপারে কার্যকর অর্থবহ পদক্ষেপ না নিলে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পৃথক রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প পথ থাকবে না। সভায় দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রশ্নে নতুন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তক বিবিসিকে দেয়া বক্তব্যকে দুর্ভা̈গ্যজনক আখ্যায়িত করে বলা হয় যে, নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকারান্তরে দেশব্যাপী সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসকে অস্বীকার করার মধ্যে দিয়ে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কার্যক্রমকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই কার্যক্রম ও বক্তব্য নয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সৌদি আরবে যাওয়ার আগে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন । সভায় নতুন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো সাম্প্রদায়িকতাপূর্ণ পক্ষপাতদুষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। সভায় সংখ্যালঘু আসন সংরক্ষণ বিলের সাম্প্রতিক উদ্যেগের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার পর যুক্ত নির্বাচনের ভিত্তিতে সংখ্যালঘুদের জন্য ৬০ আসন সংরক্ষণের দাবি জানানো হয়। সভায় ডক্টর অনুপম সেন, অ্যাডভোকেট সুভাষ লালা, রানা দাশগুপ্ত অ্যাডভোকেট, পূর্ণেন্দু বিকাশ চৌধুরী, প্রবীণ সাংবাদিক সাধন ধর, ইঞ্জিনিয়ার পরিমল চৌধুরী, স্বভু প্রসাদ বিশ্বাসসহ ৯৭ জন বক্তা বিভিন্ন বিষয়ে মতামত প্রদান করতে গিয়ে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার যে কোন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানান।

সংবাদ, ১৪ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন