দাবিকৃত ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে ব্যর্থ হয়ে মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার চরসারিস্তাবাদ গ্রামের একটি সংখ্যালঘু পরিবার সন্ত্রাসীদের ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মাদারীপুর পুলিশ সুপারের কাছে সাহায্য চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন বলে পরিবারটি অভিযোগ করেছে।

খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার চরসারিস্তাবাদ গ্রামের অমূল্য বালা পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি একই গ্রামের কালাচাঁদ বাইনের কলেজ পড়–য়া ছেলে বীরেন বাইন (২৫) নিজ বাড়িতে রহস্যজনকভাবে খুন হয়। আর এ খুনকে কেন্দ্র করে পার্শ্ববর্তী নরেরকান্দা গ্রামের সন্ত্রাসী শাজাহান মোল্লা ও তার বাহিনী শুরু
করে গণহারে চাঁদাবাজি। কেউ দাবিকৃত চাঁদার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সে অমনি তাকে খুনের মামলার আসামি করা হবে বলে হুমকি ধমকি প্রদর্শন করে। ফলে অনেকে মিথ্যা মামলার আসামি হওয়ার ভয়ে শাজাহান বাহিনীকে চাঁদার টাকা পরিশোধ করে।

অভিযোগে জানা যায়, বীরেন খুন হওয়ার কিছুদিন পরে শাজাহান মোল্লা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা স্থানীয় মোড়ার বাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে খুনের মামলার আসামি করার ভয় দেখিয়ে গ্রামের অমুল্য বালার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। কিন্তু দিনমজুর কাঠমিস্ত্রি অমূল্য সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে ব্যর্থ হয়। যে কারণে গত ১২ মার্চ বিকালে শাজাহান মোল্লা ও তার বাহিনী অমূল্য বালার বাড়িতে আসে এবং কাউকে না পেয়ে তার বড়ো ছেলে অনুকূল (১৭)কে রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যায়। তারপর থেকে অনুকূল নিখোঁজ রয়েছে। বিষয়টি তাৎক্ষনিকভাবে রাজৈর থানার ওসি এম এ করিমকে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ ব্যাপারে অমূল্য বালা মাদারীপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করলে শাজাহান মোল্লা ও তার বাহিনী অমূল্যের বাড়িঘরে লুটপাট চালায়। এবারো ওসি কোনো ভূমিকা নেননি। এ ঘটনার কয়েকদিন পর শাজাহান মোল্লা একটি প্রভাবশালী মহল ও থানা পুলিশের আশীর্বাদ নিয়ে অমূল্যবালার বসতঘর অন্যান্য মালামাল লুট করে পরিবারটিকে ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছেদ করে দেয়।

অসহায় অমূল্য এবারো ওসির শরণাপন্ন হয়। ওসি তার অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে তাকে গালিগালাজ করে। অনেক অনুনয় বিনয়ের পর থানা একটি মামলা গ্রহণ করে। কিন্তু পুলিশ শাজাহান মোল্লা ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের আজো গ্রেফতার করেনি। এ ব্যাপারে তদন্ত কারী দারোগা আবুল কালামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, অমূল্য বালার বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা সত্য এবং মালামাল উদ্ধারের জন্য তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

বর্তমানে শাজাহান মোল্লা একটি মিথ্যা মামলায় জড়িয়েও অমুল্য বালাকে হয়রানি করছে বলে জানা যায়। এ অবস্থায় বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আমলে আনার জোর দাবি করেছেন এলাকাবাসী।

ভোরের কাগজ, ১১ আগস্ট ২০০১

কৃতজ্ঞতা: শ্বেতপত্র-বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ১৫০০ দিন

মন্তব্য করুন