টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে চাহিদা মতো টাকা দেয়ায় রাতভর হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন শতাধিক ধান কাটা শ্রমিক।

 

১৮ এপ্রিল শুক্রবার জেলা কৃষি অফিসের অনুমতিপত্র নিয়ে দুটি ট্রাকে করে পাবনা থেকে হবিগঞ্জে ধান কাটতে যাচ্ছিলেন তারা।

তবে পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, কঠোর বিধিনিষেধ মানাতেই ট্রাক আটকে দেয়া হয়েছে।

পাবনার আতাইকুলা এলাকার ৬৫ বছরের বৃদ্ধ রবিউল ইসলাম। জীবিকার তাগিদে অনেকের সাথে ধান কাটা শ্রমিক হিসাবে যাচ্ছিলেন হবিগঞ্জে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১১ দিকে এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ তাদের বহনকৃত দুটি ট্রাক আটকে দেয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন।

রবিউল অভিযোগ করে বলেন, এই বৃদ্ধ বয়সে শুধুমাত্র পেটের দায়ে বিদেশের বাড়িতে ধান কাটতে যাচ্ছি। যদি আটকেই দিবে তখন এলাকাতেই আটকে দিত। থানা, পুলিশ, প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই তো আমরা ধান কাটতে যাচ্ছি। এই বৃদ্ধ বয়সে কয় বেলা না খেয়ে থাকা যায়? এখন জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারলেই বাঁচি। সেখানেই না হয় পরিবারের সাথে না খেয়ে মরবো।
কঠোর বিধিনিষেধে সব কিছু বন্ধ থাকায় তার মতো আরো ১২০ জন কৃষি শ্রমিক রাতভর নানা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

তারা জানান, পাবনা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে কোন সমস্যা হয়নি। এলেঙ্গা আসার পর পুলিশ তাদের ট্রাক আটকে দেয়। এসময় টাকা দাবি করে টাকা দিতে না পারায় ট্রাক দুটি থানার সামনে নিয়ে আসে। রাতে গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে। না খেয়ে রাত থেকে কষ্ট করতে হচ্ছে। পায়খানা প্রসাবের জায়গা না থাকায় কষ্ট আরো কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। আমরা এখন কি করবো কিছুই বুঝতি পারছি না।
তারা আরো বলেন ‘কাজ না থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করতেছিলাম। তাই আমাদের উপজেলা কৃষি অফিসার ও চেয়ারম্যানের প্রত্যায়ন পত্র নিয়ে ধান কাটতে হবিগঞ্জের দিকে যাচ্ছিলাম। পুলিশ আমাদের অনুমতিপত্র জব্দ করে রেখেছে।’
ট্রাক চালক উজ্জ্বল মিয়া বলেন, ‘গতকাল বিকেলে পাবনা থেকে রওনা দিয়েছি। রাত ১১টার দিকে এলেঙ্গা আসলে পুলিশ এক অফিসার টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তারা ট্রাকের সব শ্রমিক নামিয়ে দিতে বলেন। শ্রমিকদের বাসে যেতে বলেন। পরে অপর এক পুলিশ অফিসার এসে শ্রমিকসহ ট্রাক ফাঁড়িতে নিয়ে আসেন। গাড়ির কাগজপত্র পুলিশ জব্দ করেছে।

পাবনা সদর কৃষি অফিসার হাসান রশিদ হোসাইনী বলেন, ‘তাদের অনুমতি পত্র দেওয়া আছে। তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে রিকুয়েস্ট করেছি। পুলিশ হয়তো বা আইনগতভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু মাবনিক দৃষ্টিতে কাজটি তেমন ভাল হয়নি। আরেকটি বাস ব্যবস্থা করে পুলিশ তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে সহযোগিতা করতে পারতেন।’

এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইয়াসির আরাফাত বলেন, টাকা দাবির বিষয়টি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, ‘শ্রমিকরা একটি ট্রাকে ৪৮ ও অপর ট্রাকে ৭২ জন শ্রমিক বহন করছিলো। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে তারা গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। এছাড়া গতকাল মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক দুর্ঘটনায় পাঁচ জন নিহত হয়েছেন। সবকিছু মিলিয়ে সরকারি কঠোর ববিধিনিষেধের আদেশ পরিপন্থী কাজ করায় তাদের ট্রাক আটক করা হয়েছে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাসের ব্যবস্থা করে দিতে চাইলে তারা রাজি হয়নি। পরে তাদের পুলিশের নিজস্ব অর্থায়নে গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

শনিবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৫ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও গন্তব্যে যেতে পারেনি শ্রমিকরা।

চ্যানেল আই অনলাইন

মন্তব্য করুন