ঢাকার ধামরাইয়ে একটি মসজিদ সংলগ্ন গাছ থেকে কলা চুরির অপবাদে থুতু চাটানো ও বিবস্ত্র করে বিচারের ঘটনায় অপমান সইতে না পেরে স্ট্রোকে এক বৃদ্ধের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার দুই দিনেও অভিযুক্তদের কাউকে আটক করেনি পুলিশ।

 

১৫ জুন সোমবার দুপুরে ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ধামরাই থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন।

এর আগে ১২ জুন শুক্রবার সকালে উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ হাতকোড়া জামে মসজিদের অভ্যন্তরে ওই বৃদ্ধকে নির্মম নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ওই দিন রাতেই অপমান সইতে না পেরে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান পাহালী প্রামানিক (৬০) নামে ওই বৃদ্ধ। তিনি ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ হাতকোড়া গ্রামের মৃত আজগর প্রামানিকের ছেলে।

ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, ১১ জুন বৃহস্পতিবার পাহালী প্রামানিকের ছেলে ওমর তার বাবার বপন করা গাছ থেকে কলা কাটেন। জানতে পেরে মসজিদ কমিটির সদস্য আবুল হোসেন, জিন্নাত হোসেন, মনোয়ার হোসেন ও মজিবর রহমানসহ উৎসুক মুসল্লিরা এ ঘটনাটি চুরি বলে অপবাদ দেয়।

পরে কলার কাঁদি মসজিদে জমা দিলেও চুরির ঘটনা আখ্যা দিয়ে অভিযুক্ত বৃদ্ধ পাহালি প্রামানিককে মসজিদের ভিতরে বিচারের সম্মুখীন করেন মুসল্লিরা। এ সময় শাস্তি হিসেবে সবার সামনে তাকে কান ধরে উঠবস করানো, কলার কাঁদি মাথায় নিয়ে মসজিদের চারপাশে ঘোরানো, মসজিদের মেঝেতে থুতু ফেলে সেই থুতু চেটে খেতে বাধ্য করা ও বিবস্ত্র করা হয়। এরপরও ক্ষান্ত না হয়ে আবারো স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মসজিদ কমিটির সভাপতির নিকট বিচার দেয়া হয়। পরে রাতে এসব ঘটনায় চরম অপমানিত হয়ে দুঃখ-কষ্টে ঘুমের ঘোরে স্ট্রোক করে মারা যান বৃদ্ধ পাহালী প্রামানিক।

নিহতের ছেলে পুলিশ সদস্য রুবেল হোসেন বলেন, মসজিদের নামে ৩৬ শতাংশ জমি দান করে দিয়েছিলেন আমার বাবা। অথচ মসজিদ সংলগ্ন নিজের রোপন করা গাছের কলার কাঁদি কাটা নিয়ে বাবাকে চুরির অপবাদ নিয়ে বর্বর নির্যাতনের শিকার হতে হলো। এসব অপমানের জেরে তিনি স্ট্রোক করে মারা গেলেন। যাদের কারণে এমন ঘটনা তাদের সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ বিষয়ে গাঙ্গুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ হাতকোড়া জামে মসিজদের সভাপতি কাদের মোল্লা বলেন, কলা কাটার বিষয়ে পাহালী প্রামানিক আমার কাছে এসেছিলেন। আমি তাকে বসে বিষয়টি মীমাংশা করার কথা বলেছিলাম।

এ বিষয়ে কাওয়ালীপাড়া বাজার তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু সাইদ বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে বৃদ্ধকে অপমানিত করার সত্যতা নিশ্চিত হয়েছি। বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত হয়েছে। থানা থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে এ ঘটনার দিনই থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও মামলা হয়নি।

এ বিষয়ে ধামরাই থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন বলেন, অপমানিত হয়ে বৃদ্ধের মৃত্যুর কথা শুনেছি। কিন্তু তাকে সরাসরি কেউ মারেনি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানেন। এ ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

লিখিত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। মামলার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

ঢাকা টাইমস

মন্তব্য করুন