তানোর উপজেলার রাতৈল গ্রামের আদিবাসীরা ক্ষমতাসীন বিএনপি ক্যাডারদের হুমকিতে সন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়েছে। বিএনপি ক্যাডার জলিল কর্তৃক আদিবাসী গৃহবধূ ধর্ষণ চেষ্টা মামলা প্রত্যাহার অন্যথায় এলাকা ছেড়ে চলে যাবার জন্য তাদেরকে (আদিবাসী) বিএনপির ক্যাডাররা হুমকি প্রদান অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি দু’শ আদিবাসী পরিবারের বাস রাতৈল গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার অন্তত ১৫ আদিবাসী পরিবার সরকারী খাস জমিতে বসবাস করে। তারা লিজ পাবার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও করেছে। এদিকে স্থানীয় বিএনপির কয়েক প্রভাবশালী নেতা ওই খাস জমি নিজেদের দখলে নেয়ার জন্য বসবাসকৃত আদিবাসীদের উচ্ছেদের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসাবে সন্ত্রাসী জলিল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা আদিবাসী মহিলাদের বিভিন্ন সময় ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। গত ৩০ এপ্রিল আদিবাসী অনীল মুরমুর স্ত্রী সাবিত্রী মুরমুকে জলিল ও তার লোকজন ধর্ষণের চেষ্টা করলে আদিবাসীরা তাকে আটক করে স্থানীয় চেয়ারম্যানের হাতে সোপর্দ করে। চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন সন্ত্রাসী জলিলের বিচার না করে উল্টো বিচারপ্রার্থী আদিবাসীদের মারপিট ও এলাকা ছেড়ে চলে যাবার হুমকি প্রদান করে। পরে ২ মে সন্ত্রাসী জলিল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা উক্ত আদিবাসী পরিবারকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টায় গভীর রাতে তাদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ খবর দৈনিক জনকণ্ঠসহ বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হলে পুলিশ জলিলকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান মফিজ আরও ক্ষেপে যায়। সে আদিবাসী মহিলা ও শিশুদের পর্যন্ত ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি এবং জলিলের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের চাপ সৃষ্টি অব্যাহত রেখেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্থানীয় আদিবাসীরা তাদের নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছে। সন্ত্রাসী জলিল গ্রেফতার হলেও আদিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের মূল হোতা শতাধিক অপরাধের নায়ক সন্ত্রাসের গডফাদার মফিজ চেয়ারম্যান প্রতিদিন দলবল নিয়ে আদিবাসীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জলিলসহ বিএনপি ক্যাডারদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রকাশ্যে চাপ সৃষ্টি করছে। অন্যথায় আদিবাসীদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করে আদিবাসীরা জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন। এদিকে রাজশাহী এডাবের একটি প্রতিনিধি দল রাতৈল গ্রাম পরিদর্শন করেন। এডাব নেতৃত্ববৃন্দ আতঙ্কিত আদিবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন ব্যাস্টের এডভোকেট আব্দুস সামাদ, এডাবের সমন্বয়কারী মহিউদ্দিন, আদিবাসী (জাতীয়) পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ সরেন প্রমুখ।

দৈনিক জনকন্ঠ, ৪ জুন ২০০২

মন্তব্য করুন