বৃদ্ধ মা ও তার পুত্রকে বিবস্ত্র করে পিঠমোড়া দিয়ে জামাতের নেতার বাড়িতে ৫ ঘণ্টাব্যাপী নির্যাতনের ঘটনায় কালিগঞ্জের গ্রামে তোলপাড় শুরু হয়েছে। নির্যাতিত ঐ সংখ্যালঘু পরিবারকে শেষ পর্যন্ত উদ্ধার করে তাদের বাড়িতেই বসানো হয়েছে পুলিশ পাহারা। মৌলবাদী জামাত-শিবিরের এই নারকীয় ঘটনাবলীর পর থেকে ঐ এলাকায় সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারগুলোর মাঝে এখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে খবর পাওয়া। জানা গেছে, গত রোববার জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে কালিগঞ্জের ফতেপুর গ্রামের জামাত নেতা মোসলেম গাজি তার দলীয় কর্মী ও শিবির ক্যাডারদের নিয়ে বিধবা বৃদ্ধা সুন্দরী বালার (৬০) বাড়িতে প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা চালায়। তারা বাড়ির ধান, চাল, কাঁথা-বালিশ, গৃহস্থালি জিনিসপত্র লুট করে। এ সময় তারা সুন্দরী বালা ও তার পুত্র গোবিন্দ সরদারকে (৩৫) মারপিট করে। জামাত-শিবির নেতৃত্বাধীন ঐ ৩০/৪০ জন সন্ত্রাসী এই তাণ্ডবের পর ঐ বাড়ি দখল করে নেয়। এরপরই সুন্দরী বালা ও তার পুত্র গোবিন্দকে জামাত নেতা মোসলেমের বাড়িতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে বিবস্ত্র করে পিঠমোড়া দিয়ে খুঁটিতে বেঁধে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। এ ঘটনার ৫ ঘণ্টা পর কালিগঞ্জ থানা পুলিশে খবর পৌঁছায়। পুলিশ স্থানীয় ইউপি সদস্য আনারুল ও অন্যদের উপস্থিতিতে গোবিন্দ সরকার ও তার মাকে মুক্ত করে কালিগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। গোবিন্দ সরদারের প্রতিবেশী সুবল সরদার এ ব্যাপারে বাদী হয়ে মোসলেমকে প্রধান আসামি করে ৩০/৪০ জন অজ্ঞাতনামা লুটেরা সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এরপর থেকে ঐ সংখ্যালঘুর বাড়িতে পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে। এই ঘটনার নেপথ্য কাহিনী অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুন্দরী বালার ৫৪ শতাংশ বাড়ির জমি নিয়ে বিরোধ চলছে মোসলেম গাজি গংয়ের। আকস্মিকভাবে এই বাড়ি দখলের জন্য তারা ঐ দিন সকাল ৭টায় এই হামলা চালায়। হামলায় আরো অংশ নেয় জামাত নেতা মোসলেমের পুত্র শিবির ক্যাডার মনিরুজ্জামান, মোস্তাসিম বিল্লাহ, মোকলেসুর ও অহেদ ছাড়াও সমমনা লুটেরা সন্ত্রাসীরা। বাড়িতে লুটপাটের পর তারা অস্ত্রের মুখে বিবস্ত্র করে ফেলা মা ও পুত্রকে খেজুর পাতার পাটি ও চটের বস্তা দিয়ে মোড়ে। এরপরই তাদেরকে উদোম অবস্থায় মোসলেমের বাড়িতে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। এ সময় পালিয়ে যাওয়া ঐ পরিবারের অপর দুই সদস্য আতঙ্কের মুখে রয়েছে। এরই মধ্যে সন্ত্রাসীরা দখলও করে নিয়েছে সুন্দরীর বাড়িঘর। ঘটনার দিনেই তারা সেখানে মুরগি জবাই করে খানাপিনা করেছে।

ভোরের কাগজ, ৪ জুন ২০০২

মন্তব্য করুন