দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সংখ্যালঘু মহিলাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কিছু কিছু গ্রামের মহিলারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। এরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে যেতে পারছেনা। সংখ্যালঘু ছাত্রীরা কলেজ স্কুলমুখী হচ্ছে না। অনেকে সম্ভ্রম রক্ষার জন্য অন্যের বাড়িতে রাত যাপন করছে। মাঝ রাতে নারীর করুণ আর্তচিৎকারে এই অঞ্চলের গ্রামের পর গ্রাম কেঁপে উঠছে। এক অনুসন্ধানে জানা যায় , নির্বাচনের পর থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সন্ত্রাসী লম্পট কমপক্ষে ৫০ মহিলা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ২ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। অব্যাহত নারী নির্যাতনের ঘটনায় হাজার হাজার মহিলার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। খবর নিয়ে জানা যায়, ১ অক্টোবর নির্বাচনের পর দিন থেকেই এই অঞ্চলে সন্ত্রাসীরা তাদের কালো থাবা বাড়িয়ে দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে সংখ্যালঘুদের ওপর মারপিট শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঢিলেঢালা হওয়ার কারণে এরপর শুরু হয় বাড়ি ঘর লুটপাট। নৌকার সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আর এই সুযোগে লম্পটরা তাদের টার্গেট হিসাবে সংখ্যালঘু মহিলাদের বেছে নেয়। রাতের আঁধারে হায়েনার মতো একের পর এক নারী ধর্ষণের উন্মাদনায় মেতে ওঠে। ঝিনাইদহের তাওপুর, ঠেকডাঙা, ঋষিপাড়া, বেলেডাঙা, তিল্লা গ্রামে সংখ্যালঘু মহিলাদের ধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সন্ত্রাসীরা ধর্ষণের পর হুমকি দিচ্ছে কাউকে জানালে টুকরো টুকরো করা হবে । ইতোমধ্যে ঐ সব গ্রামের বেশ কিছু মহিলা গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। মহিলাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার কারণে কলেজ স্কুলে সংখ্যালঘু ছাত্রীদের উপস্থিতি শূন্যে নেমে এসেছে। তাওপুর গ্রামের এক গৃহবধূ বিজলী রাণী এই প্রতিবেদকের কাছে বলেছেন, সে ইজ্জত রক্ষার কারণে রাতে বাড়িতে না ঘুমিয়ে প্রতিবেশী এক মহিলার বাড়িতে ঘুমায়। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ৭/৮টি ধর্র্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এখানে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির দুই বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তুু লম্পটদের হুমকি ধমকির আর লোকলজ্জার ভয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষণের ঘটনা চেপে যাওয়া হচ্ছে। ৯ অক্টোবর মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার নহাটা গ্রামে তিন সংখ্যালঘু ছাত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়। সন্ত্রাসীরা বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাবা মা আত্মীয়স্বজনকে পিটিয়ে ঐ তিন ছাত্রীকে ধরে নিয়ে যায়। রাতভর তাদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে গ্রামের একটি মাঠেতিনজনকে ফেলে রাখে। পরে তাদের উদ্ধার করা হয়। কিন্তু ধর্ষণকারীদের অব্যাহত চাপের মুখে এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। বাগেরহাটের বিভিন্ন সংখ্যালঘু গ্রামে একাধিক গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। লোমহর্ষক সেসব কাহিনী এই অঞ্চলের সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। নারী নির্যাতনের এসব ঘটনায় কোন কোন গ্রামে রাত জেগে গ্রামবাসীরা পাহারা বসিয়েছে। কিন্তু অবস্থার কোন উন্নতি হচ্ছে না। ফলে বিপদগ্রস্ত মহিলারা বাড়ি ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।

দৈনিক জনকন্ঠ, ১৫ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন