নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভার কালাদি এলাকার এক এতিমখানার শিক্ষার্থী ফাহিম নামে ১৩ বছরের প্রতিবন্ধী শিশুকে হাত-পা বেঁধে মারধর করে আয়রণ দিয়ে শরীর ঝলসে দিয়েছে দুই শিক্ষক। এ ঘটনায় শাহ্পরাণ ও শাহজালাল নামে সহোদর দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। পরে তাদের বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দিয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

 

রূপগঞ্জ থানায় ভুক্তভোগীর অভিযোগপত্র ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার কালাদী এলাকার এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের পাশে আল মদিনা ইসলামীয়া ছামির উদ্দিন সুন্নিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অধ্যয়নরত প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থী ফাহিমকে হাত-পা বেঁধে মারধর করে গুরুতর জখম করে তার দুই শিক্ষক শাহজালাল ও শাহ পরান।

শুধু তাই নয়, তাকে বৈদ্যুতিক আয়রন দিয়ে শিশুর নিতম্ব ঝলছে দেয় তারা। এতোক্ষনে কাপড় পুড়ে গেলে তরিঘড়ি করে বিষয়টি ধামা-চাপা দিতে প্রতিবন্ধী শিশুকে ৩ দিন ওই মাদরাসায় আটকে রেখে কবিরাজি চিকিৎসা করায়। এতে শিশুটির পুড়াস্থানে গর্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। এ ঘটনা মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি জয়নাল সহ অন্যরা জানলেও ফাহিমের পরিবারকে না জানিয়ে সবাই মিলে গোঁপন করার চেষ্টা করে। ঘটনার ৫ দিন পরে তাদের এমন নিষ্ঠুর আচরণে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে প্রতিবন্ধী ফাহিম।

বুধবার (২৩ জুন) ভোরে এতিমখানা থেকে পালিয়ে চলে যায় নানা শহীদুল্লাহর কাছে। তার শরীরের অবস্থা গুরুতর দেখে নানা শহীদুল্লাহ তাকে তাৎক্ষণিক স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে শিশু ফাহিম চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় ২৪ জুন সকালে রূপগঞ্জ থানায় ওই অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। (মামলা নং ৩৪)।

গ্রেফতারকৃত দুই নির্যাতন কারী শিক্ষক নরসিংদী জেলার মাধবদী থানার মাইসাদী গ্রামের আবু বক্করের ছেলে। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসায় কর্মরত থেকে বিভিন্ন সময় শিশু নির্যাতন করতো।

প্রতিবন্ধী ফাহিমের নানা শহীদুল্লাহ জানান, ফাহিমের মা-বাবার বিবাহ বিচ্ছেদের পর মা ফাতেমা চলে যান বিদেশে আর বাবা রনি নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। তার নাতি ফাহিমকে ছোট থেকে তিনিই লালন-পালন করেন। নাতিকে দ্বীনি শিক্ষা দিতে তিনি ওই এতিমখানায় ভর্তি করে দেন। দরিদ্র থাকায় ফাহিমের খরচের জন্য এলাকার ওয়ার্ড কমিশনারের সহযোগিতায় প্রতিবন্ধী ভাতা পায় সে।

এ বিষয়ে কালাদি এতিম খানার পরিচালনা কমিটির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, শিশুটি প্রতিবন্ধি থাকায় অসাবধানতাবশত আয়রনের ছ্যাঁকা খেয়েছে। তবে অভিযুক্ত শিক্ষকরা অতীতেও কিছু শিক্ষার্থীদের মারধর করার পর আমরা তাদের সাবধান করেছিলাম। তবে তারা তা শুনেনি।

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল ফয়সাল মোহাম্মদ সায়েদ বলেন, শিশুটির নির্যাতনের শিকার হলেও বাদীকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছিলো নির্যাতনকারীদের পক্ষের লোকজন। পরে পুলিশের নজরে এলে তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করি এবং শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করে আসামীদের নারায়ণগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করা হয়।

এদিকে গ্রেফতারের পর ওই সহোদর দুই ভাই শাহাজাল ও শাহ্পরানের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ পাওয়া যায়। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মসজিদে ও মাদরাসায় চাকুরী করাকালীন নারী ক্যালেঙ্কারী ও শিশু নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত হয়। ওইসব ঘটনায় শাস্তি ও লাঞ্ছনা করে সাবেক সকল কর্মস্থল থেকে বিতারিত হয়।

গুতিয়াবো এলাকার বাসিন্দা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শাহজালাল নামের ওই অভিযুক্ত ইমাম গুতিয়াবো মসজিদে চাকুরী করাকালীন একটি নারীকে তার কক্ষে নিয়ে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়।এ ঘটনা জানাজানি হলে তাকে চুনকালি মেখে এলাকা থেকে বিদায় করা হয়। পরে কালাদি এলাকায় ওই মাদরাসায় পরিচয় গোঁপন করে চাকুরী নেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালাদির বাসিন্দা জানান, এই এতিমখানার প্রতিটি এতিম শিশুদের উপর নানাভাবে শারীরিক অত্যাচার ও নির্যাতন করতো।এশিয়ান হাইওয়ের মতো ব্যস্ততম সড়কে মাদরাসার জন্য টাকা তুলতে বাধ্য করতো। এমনকি শিশুদের দিয়ে সমস্ত কাজ করায় তারা। শিশুরা তার কথা না শুনলেই মারধর করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে এবং খাবার না দিয়ে কষ্ট দেয়। এ বিষয়ে কোন শিশুরা মুখ খুললেই হিংস্র রূপ ধারণ করে।

খোলা কাগজ

মন্তব্য করুন