বিএনপি সন্ত্রাসী ও জামাত-শিবির ক্যাডারদের নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী সমর্থক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে। বাড়িঘরে হামলা লুটপাট অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। নির্যাতন চালিয়ে অনেককে বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে বাড়িঘর থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। অনেককে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হামলার আশঙ্কায় অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কোথাও কোথাও সংখ্যালঘুদের পুকুরের মাছ লুটের ঘটনাও ঘটেছে। সাংবাদিকরাও সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বিএনপি সন্ত্রাসী ও জামাত-শিবির ক্যাডারের তাণ্ডবে বিভিন্ন স্থানে বহু লোক আহত হচ্ছে। পুলিশের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই পরিস্থিতিতে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাভার থেকে সংবাদদাতা জানান,নির্বাচনোত্তর সহিংসতার জের হিসাবে সাভারে চরম আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে আওয়ামী লীগ কর্মী ও সমর্থকরা হামলার আশঙ্কায় অনেকে পালিয়ে গেছে। মহিলারা শুধুমাত্র অবস্থান করছে চরম আতঙ্কে। পৌর এলাকার পালপাড়া, ভাটপাড়া,কাতলাপুর,ভাগলপুর এলাকায় গত কয়েকদিনে সন্ত্রাসীদের মোটর সাইকেল মহড়া, নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা ও ভাংচুর এবং কর্মীদের মারপিটের পর আসন্ন শারদীয় দুর্গাপুজার আয়োজন বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া শিমুলিয়া,বিরলিয়া, ডাকুর্তা ইউপির অনেক এলাকাতেই অনেক পুজা মণ্ডপে এবার আর দুর্গা পুজা হচ্ছেনা বলে জানা গেছে। এলাকাগুলোতে ঘুরে শুক্রবার সারাদিন দেখা গেছে সংখ্যালঘুদের পরিবারগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কক্সবাজার থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, উখিয়া ও মহেশখালিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। উখিয়ায় সংখ্যালঘুদের পুকুরের মাছ পর্যন্ত লুট করে নেয়া হচ্ছে। উখিয়ায় ব্রজেন্দ্র সেনের এবং তরুণী মোহনের পুকুরের কয়েক লাখ টাকার মাছ লুট করে নিয়েছে হামলাকারীরা। ওদিকে মহেশখালী দ্বীপের বড় মহেশখালীতে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে আমতলীর কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নের আঙ্গারপাড়া ও চাউলাপাড়া গ্রামের ১৬টি সংখ্যালঘু পরিবারকে মারধর করে বাড়িঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানকার একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসীগোষ্ঠী এ ঘটনা ঘটিয়েছে। মারধরে গুরুতর আহত হয় নরেন (৪০),রণজিত (২৮) ও সঞ্জিত (৩২)। সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা কলাপাড়ার চিঙ্গরিয়া ও নাছনাপাড়া এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। নওগাঁ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন পাড়ায়- মহল্লায় সংখ্যালঘুদের দেয়া হচ্ছে হুমকি। শহরের দোগাছী, পিরোজপুর, সুলতানপুর, দুর্গাপুর, শৈলগাছী, রানীনগরের ত্রিমোহনী এবং চকদিন এলাকায় চার দলীয় জোটের নাম করে সন্ত্রাসীরা সংখ্যালঘুদের নানাভাবে হয়রানি ও হুমকি অব্যাহত রেখেছে। ত্রিমোহনীর হিন্দুরা দোকান পাট বন্ধ রেখেছে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে তারা অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। সংখ্যালঘুরাই এখন তাদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। বাউফল থেকে সংবাদদাতা জানান, পৌর শহরের দাশপাড়ায় ঠাকুরবাড়ীর পুজামণ্ডপে হামলা করে দুর্গাসহ ৮টি প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে । বুধবার গভীর রাতে কিছুসংখ্যক দুস্ক্রিতকারী হামলা করে এ প্রতিমা ভাংচুর করে।

ভোরের কাগজ, ৬ অক্টোবর, ২০০১

মন্তব্য করুন