নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মারাত্মক আহতরা বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং খুলনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ‘হাসপাতালে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। এ সকল সহিংসতার শিকার হচ্ছে আ. লীগের কর্মী, সমর্থক’ এবং সংখ্যালঘুরা। পিরোজপুর জেলায় সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। ̄স্বরূপকাঠি উপজেলার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আটখার কুড়িয়ানা, সমুদয়কারী, জলাবাড়ি, দৈহারী ও গুয়ারেভা ইউনিয়নে। মুক্তিযুদ্ধের সময় অন্যতম রাজাকার বর্তমানে বিএনপি নেতা মতিয়ার রহমান শিকদারের নির্দেশে বিভিন্ন গ্রামের বাড়ি বাড়ি হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, লুটপাট, মারধর, যুবতী মেয়েদের লাঞ্ছিত করা, কুপিয়ে আহত করা হচ্ছে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায়। গত ৪ঠা অক্টোবর মারাত্মকভাবে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে দৈহারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জগদীশ শিকদারকে। তিনি এখন বরিশাল মেডিকেল হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছেন। ঐ এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে ‘৭১-এর অব ̄স্থাকেও হার মানিয়েছে গত ৪ দিনে। স্বরূপকাঠি হাসপাতালে জায়গা দিতে না পেরে এখন বানারিপাড়া ও পরিশালে আহতদের পাঠানো হচ্ছে। মঠবাড়িয়া উপজেলার প্রায় সর্বত্র সংখ্যালঘুদের ওপর এবং আ. লীগ সমর্থিতদের ওপর হামলা চলছে বলে ‘সংবাদ’কে জানিয়েছেন আ. লীগ প্রার্থী অধ্যাপিকা মাহমুদা সওগাত। তিনি জানান, উপজেলার নীল ভীমচন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জাতির পিতার ছবি নামিয়ে বিএনপি সমর্থকরা তা ভেঙে ফেলে। সংখ্যালঘুদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। পিরোজপুর সদর ও নাজিরপুর উপজেলার সাংসদ জামাত নেতা মওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী গত ৩রা অক্টোবর এক বিজয় সভায় দাঁড়িয়ে বলেন, সংখ্যালঘুরা আমাদের আমানত তাদের রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। তার এ বক্তব্যের পরেই পৌর এলাকার আলমকাঠিতে অমুল্য মজুমদারকে বেদম মারপিট করা হয়, দুর্গাপুর ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের দীপক হালদারের মুদি দোকান ভেঙে খালে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এ সকল এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শত শত মানুষ পুত্র কন্যা ও তল্পিতল্পাসহ পার্শ্ববর্তি চিতলমারিতে আশ্রয় নিচ্ছে। মাটিভাঙা ইউনিয়নের নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক অধ্যাপক জানালেন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় যেভাবে মানুষ দেশত্যাগ করেছে, নির্বাচনের পরের দিন থেকে লোকের এলাকা ত্যাগের ঘটনাও ’৭১কে মনে করিয়ে দেয়। এলাকা ছেড়ে চিতলমারীতে অবস্থানরত জনৈক মনোরঞ্জন শিকদার ‘সংবাদ’কে জানান, ভোটের দিন গভীর রাতে সশশ্র অবস্থায় মুখোশ পরা একদল লোক এসে ভোর হওয়ার পূর্বেই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দেয়। তারা বাড়ির একটি কুকুরকে গুলি করে হত্যা করে, তাদেরও এ অবস্থা হবে বলেও জানিয়ে যায়। শ্রীরামকাঠি থেকে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে পিরোজপুর এসেছে। এমনকি মোড়েলগঞ্জের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত হোগলাপাশা ইউনিয়ন থেকে শত শত মানুষ পিরোজপুরে চলে এসেছে। এসব ব্যাপারে প্রশাসনের কোন পদক্ষেপই নেই বলে নির্যাতিতরা জানায়।

সংবাদ, ৭ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন