নির্বাচনের পর সন্ত্রাসী তৎপরতায় চন্দ্রঘোনা কদমতলী ও রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হইয়াছে। চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়নের শ্যামপাড়া গ্রামের পাশ্ববর্তী সূফীপাড়া গ্রামের বিএনপি কর্মীরা নির্বাচনের পরবর্তী ২/৩ দিনে কয়েক দফা হামলা করিয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে মারধর ও নাজেহাল করে বলিয়া অভিযোগ পাওয়া গিয়াছে। রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের ব্রহ্মউত্তর, মজুমদার খীল, নাথপাড়া ও সাবেক রাঙ্গুনিয়া গ্রামের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় বিএনপি কর্মীদের তাণ্ডবে আতঙ্ক বিরাজ করিতেছে। নির্বাচনের পরবর্তী ২/৩ দিনে উল্লেখিত এলাকায় কমপক্ষে ১৫ ব ̈ক্তিকে মারধর করা হয়। শান্তিনিকেতন ও সাবেক দীঘিপাড়া এলাকায় কয়েকটি দোকানে লুটপাট হইয়াছে। উচ্ছৃংখল যুবকরা এসব এলাকার হিন্দু দোকানদারদের উপর মোটা অংকের চাঁদা ধার্য করিয়া পরিশোধের সময়সীমা নির্ধারণ করিয়া দিয়াছে। সময়মত চাঁদা না দিলে তাহাদের নির্যাতন করা হইবে বলিয়া হুমকি দেওয়া হইয়াছে। তাহারা গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় ইন্দ্রকুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে হামলা করিয়া অফিস কক্ষ হইতেবঙ্গবন্ধুরছবি নিয়াভাংচুর করেওপোড়াইয়াফেলে। নির্যাতনের ভয়ে শান্তিনিকেতন বাজার এলাকায় গত বৃহস্পতিবারও দোকানপাট বন্ধ ছিল। চন্দ্রঘোনা লিচু বাগান এলাকায় কতিপয় উচ্ছৃংখল যুবক ভূয়া পাওনাদার সাজিয়া জোরপূর্বক দোকানদার- ব্যবসায়ীদের নিকট হইতে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করিতেছে। বিভিন্ন স্থানে উচ্ছশৃঙ্গখল লোকজন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করিলেও প্রশাসনিকভাবে কোনপ্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংবাদ পাওয়া যায় নাই। আর বেশী নির্যাতনের ভয়ে ভূক্তভোগীরা থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করার সাহস পাইতেছে না। গত ১লা অক্টোবর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব রাতে পূর্ব কদমতলী গ্রামের হিন্দুপাড়ায় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের অগ্নিসংযোগে ২টি ঘর ভুস্মিভূত হইয়াছে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ লক্ষাধিক টাকা বলিয়া অনুমান করা হইতেছে। গভীর রাতে কে বা কাহারা টিনের চালে পেট্রোল ঢালিয়া অগ্নিসংযোগ করিলে জনৈক গোলাপ শীলের বসতঘর হইতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। পরে আগুন ব্যাপকভাবে ছড়াইয়া পার্শবর্তী কাজল শীলের বসতঘরও ভস্মিভূত হয়। আগুনের লেলিহানে সম্পূর্ণ গ্রাম আলোকিত হইলে লোকজনের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করিয়া আতংক সৃষ্টির লক্ষ্যে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটাইয়াছে বলিয়া ধারণা করা হইতেছে।

দৈনিক ইত্তেফাক, ৭ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন