বৃহস্পতিবার বিকালে লোহাগড়া বাজারে আওয়ামী লীগ-বিএনপি কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে। এ সময় আহত হন এসএসপি আমিনুল ইসলাম। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় নড়াইল-২ আসনের জোটের প্রার্থী সহিদুল ইসলামকে জেলা নির্বাচনী তদন্ত কমিটি সতর্ক করে দিয়েছে। এরপরও তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘণ করে তাঁর এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ টাকা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একটি এ্যাম্বুলেন্সে তাঁর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যাডার বাহিনী এখনও চষে বেড়াচ্ছে নড়াইলের বিভিন্ন গ্রাম। কয়েকটি সংখ্যালঘু গ্রামের ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেছেন। এমনকি তাঁর ক্যাডারদের ভয়ে নড়াইলের জনকণ্ঠ সংবাদদাতা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে লোহাগড়া আওয়ামী লীগ নেতা সিকদার সাইদুর রহমান কালনা এলাকায় ভোট চাইতে গেলে বিএনপির সন্ত্রাসীরা তাঁকে হুমকি দেয়। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর জামায়াত ও বিএনপির সশস্ত্র কর্মীরা লোহাগড়া বাজারে এসে আওয়ামী লীগ নেতাদের খুঁজতে থাকে। তারা ইট পাথর ছুড়ে মারে আওয়ামী লীগ কর্মীদের দিকে। সেখানে টহলরত পুলিশের এএসপি আমিনুল ইসলাম এগিয়ে এলে বিএনপির কর্মীরা তাঁর মাথায় ইট নিক্ষেপ করে। এতে তাঁর মাথা ফেটে যায়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে। নড়াইল-২ আসনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নেমে চারদলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী মুফতি সহিদুল ইসলাম শুরু থেকেই প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা খরচ করছেন। ইতোমধ্যে সংখ্যালঘু এলাকার গ্রামগুলোতে কয়েক শ’ নলকূপ বসিয়ে দিয়েছেন তিনি। মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল কলেজগুলোতেও অকাতরে অর্থ বিলাচ্ছেন। তাই জেলা নির্বাচনী তদন্ত কমিটির প্রধান নড়াইল জেলা সহকারী জজ সাইফুল ইসলাম জোট প্রার্থী সহিদুলকে সতর্ক করে দিয়েছেন। নড়াইলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সহিদুল ইসলামের প্রতিষ্ঠিত আলমারকাজুল ইসলাম হাসপাতালের একটি এ্যাম্বুলেন্স গত তিন চার দিন যাবত নড়াইলে রয়েছে। এতে নয়জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তালেবান ক্যাডার রয়েছে বলে নড়াইলে ব্যাপক গুজব। শহর এবং নড়াইলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। মৌলবাদী এই সন্ত্রাসীদের টার্গেট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়াও জনকণ্ঠের সংবাদদাতা রিফাত বিন ত্বহা বলে জানা গেছে।

নড়াইল সদর ও লোহাগড়া উপজেলার দু’টি আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিতে পারবে কি না এ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। মুফতি শহিদুলের সশস্ত্র ক্যাডাররা কয়েকদিন ধরে রাতে সেখানে গিয়ে তাদের হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে। ওই সন্ত্রাসীরা তাদের বলেছে, নৌকায় ভোট দেয়া যাবে না। যদি ধানের শীষে ভোট না দেয়া হয় তবে এখানে রাতে থাকতে দেব না। সবাইকে কচু কাটা করা হবে। এই দু’টি আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রায় এক হাজার ভোটার রয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিকালে নড়াইল সদর উপজেলার দরিয়াপুর হাইস্কুলের মাঠে চারদলীয় ঐক্যজোটের এক নির্বাচনী জনসভায় মুফতি সহিদুল বলেন, আওয়ামী লীগ মানে কাফের, নৌকা মানে কাফের। তাদের ভোট দেয়া চলে না। তিনি শ্রোতাদের দু’হাত ওপরে তুলে আল্লাহ রসুলের নামে কসম করিয়ে ধানের শীষে ভোট দেয়ার শপথ করিয়ে নেন। নড়াইলের আওয়ামী লীগের নেতারা অভিযোগ করেছেন, জেলার চণ্ডিবরপুর, আউড়িয়া, মুলিয়া, বাঁশগ্রাম, নলদি, নোয়াগ্রাম, লক্ষ্মীপাশা, কাশিপুর, দিঘলিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের ওপর সহিদুলের ক্যাডাররা বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধমকি দিচ্ছে। বিষয়টি তারা স্থানীয় প্রশাসনকে জানালেও কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না তারা।

সহিদুলের পক্ষে জামাতের মহিলা কর্মীরা বাড়ি বাড়ি দিয়ে কোরান শরীফ স্পর্শ করিয়ে শপথ করিয়ে নিচ্ছে। বলছে, একটি বার ভোট দিন হুজুরকে। শপথ করানোর সময় অনেক মহিলা বুঝতে পারছেন না তাদের কাছে কোরআন শরীফ রয়েছে। শপথ করানোর পর বলা হচ্ছে আপা মনে থাকে যেন, আপনি কিন্তু কোরান শরীফ শপথ করে বললেন। এসব ঘটনায় মহিলাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

দৈনিক জনকণ্ঠ, ২২ সেপ্টেম্বর ২০০১

কৃতজ্ঞতা: শ্বেতপত্র-বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ১৫০০ দিন

মন্তব্য করুন