পঞ্চগড়ে ধর্মীয় সহিংসতায় পুলিশসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ। মঙ্গলবার রাতে পঞ্চগড়ে কাদিয়ানীদের বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ মুসল্লিরা কাদিয়ানী ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে এই সহিংসতার ঘটনা ঘটে।

 

জানা যায়, আগামী ২২ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের আহমদ নগর এলাকায় তিন দিনব্যাপী বার্ষিক সালানা জলসার আয়োজন করে আহমদিয়া মুসলিম জামাত (কাদিয়ানী সম্প্রদায়)। এই জলসাকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহ ধরে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদ, ঈমান আকিদা রক্ষা কমিটি, ইসলামী যুব সমাজ ও স্থানীয় তৌহিদি জনতা দফায় দফায় আন্দেলনে নামে। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই তারা বিক্ষোভ ও স্মারকলিপিসহ বিভিন্ন আন্দোলনে নামে। এমনকি উভয় পক্ষ পাল্টপাল্টি সংবাদ সম্মেলনে তাদের দাবি তুলে ধরে।

প্রশাসন উভয় পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর আন্দেলনকারীদের নেতাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনে একটি বৈঠকে কাদিয়ানিদের জলসাটি স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়। তবে এই খবরটি পঞ্চগড় শহরের চৌরঙ্গী এলাকায় পৌঁছানোর আগেই সেখানে বিক্ষোভ মিছিলসহ মহাসড়ক অবরোধ করে মুসল্লিরা। এ সময় তারা কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ মুসল্লিরা লাঠিসোটা নিয়ে পঞ্চগড় করতোয়া সেতু পাড় হয়ে আহমদ নগর মুখে রওনা হলে পুলিশ তাদের বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে মুসল্লিদের।

এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপসহ মুসল্লিদের ওপর লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মুসল্লিরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুরে। পুলিশ ও মুসল্লিদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে প্রায় দেড় ঘণ্টা। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও মুসল্লিরা আহত হয়। সংঘর্ষের সময় সড়কের ওপর যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে মুসল্লিদের একটি অংশ বিকল্প পথে করতোয়া নদী পাড় হয়ে আহমদ নগরে কাদিয়ানীদের ওপর হামলা করে। তারা সেখানে দশ/বারোটি বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় সংঘর্ষে দুই পক্ষের অর্ধ শতাধিক মানুষ আহত হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে গিয়ে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের মধ্যে ২১ জনকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মজিদ আলী, জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন, পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন আহমদ, ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে কর্নেল মহিউস সুন্নাহ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট এহেতেশাম রেজা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাঈমুল হাছান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এ ঘটনায় ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে জেলা শহরসহ ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

আহত মোশারফ হোসেন বলেন, আমি আহমদিয়া মসজিদের ছাদে ছিলাম। ওরা দলে দলে আমাদের ওপর হামলা করে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে। বাড়িঘরে ভাঙচুর করে ও অগ্নিসংযোগ করে। তাদের ছোরা একটি ইটের টুকরো আমার মাথায় লাগে।

আহমদিয়া মুসলিম জামাত আহমদ নগরের প্রেসিডেন্ট তাহের যুগল বলেন, আমরা যখন প্রশাসনের সঙ্গে সভা করছিলাম তখনই আমরা শুনতে পারি মুসল্লিরা আহমদ নগর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারপরও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের ওপর হামলার ওপর দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এ হামলার দায় পুলিশ এড়াতে পারে না।

পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন আহমদ জানান, মুসল্লিদের বিচ্ছিন্ন একটি গ্রুপ এই হামলা করেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি কারা কারা এর সাথে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন জানান, মুসল্লিদের দাবি ছিল কাদিয়ানীদের জলসা বন্ধ করলে তারা তাদের দাবি-দাওয়া তুলে নেবে। আমরা তাদের জলসা স্থগিত করার ঘোষণা দেই তারপরও তারা এই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।

রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ বলেন, ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাক তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্রঃ প্রথম আলো, এনটিভি

মন্তব্য করুন