ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে মিছিলে না যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে রুপসদী রাধাগোবিন্দ মন্দিরে যাওয়া দু’টি পথ বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে।

 

উপজেলার রূপসদী উত্তরপাড়ার খানেপাড়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের দাবি, সরকারি টাকায় নির্মিত এই রাস্তা প্রায় দুই যুগ ধরে তারা ব্যবহার করে আসছেন।

উপজেলার রূপসদী সুজন স্মৃতি কলেজে গত শনিবার নতুন ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠান হয়। ওই অনুষ্ঠানে যেতে রুপসদী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেন উত্তরপাড়ার (খানেপারা) হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের তার মিছিলে যোগ দিতে বলেন। একই সময় রূপসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফেরদৌস মিয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে তার মিছিলে যেতে বলেন। এ নিয়ে বিপাকে পড়েন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ‌। দুই পক্ষ থেকে দাওয়াত দেওয়ায় তারা কোন পক্ষের মিছিলে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতে ক্ষিপ্ত হন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেন। পরদিন তিনি রূপসদী খানেপাড়ার রাধা গোবিন্দ মন্দিরের যাওয়ার পশ্চিম দিকের ও পূর্ব দিকের রাস্তা বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেন। মন্দিরে যেতে না পারায় এলাকায় ১৩৫টি হিন্দু পরিবার পূজা করতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন।

খানেপাড়ার ষাটোর্ধ্ব বকুল দেবনাথ বলেন, মন্দিরে আসা যাওয়ার রাস্তা বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন জাকির। এতে বাজারেও যেতে পারছি না, মন্দিরেও যেতে পারছি না। আমরা অনেক ভয়ে আছি।

খানেপাড়া রাধা গোবিন্দ মন্দিরের সহ-সভাপতি কিংকর রায় বলেন, ‘মন্দিরে যাওয়ার দু’টি রাস্তা বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন জাকির হোসেন। শনিবার অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে না যাওয়ার কারণে এমনটা করেছেন। মন্দিরে নিয়মিত আরতী করা যাচ্ছে না, অনেকেই ভয়ে আছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাকির ও ফেরদৌস ভাই দু’জনই তাদের পক্ষে মিছিলে যেতে দাওয়াত দিয়েছিলেন। এজন্য আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষ কেউ কারো পক্ষে মিছিলে যায়নি। আর মন্দিরে আসা-যাওয়ার জন্য ১৭-১৮ বছর আগে আমাদের এই রাস্তার জায়গা দিয়ে গেছেন জাকিরের বাবা। পরে সরকারি টাকায় নির্মাণ করা হয়েছে এই রাস্তা।’

অভিযুক্ত ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘এটা আমার ব্যক্তিগত জায়গা। আমার বাড়ির নিরাপত্তার কারণে এই রাস্তা বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছি। মিছিলে না যাওয়ার সঙ্গে এটার কোন সম্পর্ক নেই‌। তবে আমার বাবা এই জায়গা দিয়ে গিয়েছিলেন মন্দিরে চলাচলের জন্য, এটা সত্য।’

রুপসদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফেরদৌস মিয়া বলেন, ‘১৯৯৬ সালে সরকারি অর্থায়নে এ রাস্তা নির্মাণ করা হয়‌। এ রাস্তা আমি করেছিলাম। যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরে যাওয়ার সেই রাস্তা বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন তারা পূজা করতে পারছে না মন্দিরে যেতে না পারায়।’ এ বিষয়ে রুপসদী পরিষদের চেয়ারম্যান মহসিন মিয়া বলেন, ‘মন্দিরে রাস্তার বেড়া দেওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। আমি সরেজমিন যাব। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা।’

উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিন্টু রঞ্জন সাহা বলেন, ‘মন্দিরে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেয়া খুবই দুঃখজনক। সরকারি টাকায় এই রাস্তা নির্মাণ হয়েছে। ধর্মীয় উপাসনালয়ে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেবে কেউ, এটা মানা যায় না। এটা ব্যক্তিগত জায়গা হলেও দীর্ঘদিন যাবত এটা রাস্তা হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে, তা বন্ধ করার কোন অধিকার তাদের নেই। আমি এর নিন্দা জানাই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন সরোয়ার বলেন, ‘মন্দিরের রাস্তা বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা শুনিনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।’

সমকাল

মন্তব্য করুন