ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ত্রাণের চাল আনতে গিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুজ্জামান মাসুদ ওরফে ডলার মাসুদের সাঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শারিকি নির্যাতনে জীবন হারিয়েছে এক কৃষক। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কতিপয় প্রভাবশালী ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে স্থানীয় প্রশানের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

 

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে চরআলগী ইউনিয়নের চর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে  ১৫ এপ্রিল বুধবার ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এদিন সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মাহবুবুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। উপজেলার পুলিশ কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন এলাকাবাসীকে। মঙ্গলবার দুপুরে মোঃ জুলমত (৫২) ত্রাণের চাল বরাদ্দের চেয়ে কম দেয়া হচ্ছে বলে প্রতিবাদ করে।

এ সময় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান মাসুদ জুলমতকে চর, থাপ্পর মেরে জোরে ধাক্কা মেরে চলে যেতে বলে। এ সময় সে কাঁঠাল গাছের সাঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়। পরবর্তিতে আরও মার খাওয়ার ভয়ে আহত অবস্থায় কোনক্রমে বাড়ি ফিরে যায়। আর বাড়িতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এর কিছুক্ষণ পরেই জুলমতের মৃত্যু হয়। জুলমতের স্ত্রী হাসিনা জানান, তার স্বামী ত্রাণের চাল আনতে গিয়ে চেয়ারম্যানের মার খেয়ে বাড়িতে এসে মারা যায়। আমরা অসহায়, গরীব। মামলা করলে আরও বিপদে পড়তে হবে বিধায় আল্লাহর কাছে বিচার চাচ্ছি। এ ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই। নিহত জুলমতের পুত্রবধু নিলফার ইয়াসমিন কথায়, আমরা গরীব বলেই আমার শ্বশুর সেখানে গিয়েছিলেন চাল আনতে।

সাবেক ইউপি সদস্য হানিফ জানান কথা কাটাকাটির পর মাসুদ চেয়ারম্যান নিজে গিয়ে জুলমতকে বাড়িতে চাল দিয়ে আসে। এর আগেই যে জুলমত দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিয়েছে সেটা চেয়ারম্যান বুঝতে পারেনি। সচক্ষে জুলমতকে মৃত অবস্থায় দেখার পর গাঁ ঢাকা দিযেছে চেয়ারম্যান মাসুদ। এখনই চাল কে খাবে? এ ব্যাপারে চরআলগী ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুজ্জামান মাসুদ বলেন, আমি ত্রাণের চাল দিয়ে আমার অস্থায়ী কার্যালয়ে চলে আসি এরপর ফোনে আমাকে খবর দেয় জুলমত মারা গেছে।

গফরগাঁও থানার ওসি অনুকুল সরকার বলেন, ঘটনাস্থল থেকে রাতে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রানের ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যক্তি এই ন্যাক্কারজনক, অমানবিক ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা সবাই খুনি চেয়ারম্যান মাসুদুজ্জান মাসুদের দৃস্টন্তমুলক শাস্তী দাবী করেছেন। এদিকে বুধবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মাহবুবুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মামুনুর রহমানকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন। কমিটির অন্যান্য সদস্য উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা।

 

উল্লেখ্য, লাশের ময়নাতদন্ত ছাড়া মাটি দেয়ার জন্য গফরগাঁও থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় তদবির করেছেন এলাকার অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি। কিন্তু মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়েও সফল হতে পারেননি তারা। রাতে আনা লাশ থানা থেকে নেয়ার জন্য অনেক চেস্টা, তদ্বির করা হয়। কিন্তু পুরিশ ও স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তারা কঠোর থাকায় ভেস্তে যায় তাদের অপচেস্টা।

জনকণ্ঠ

মন্তব্য করুন