জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেনের নামে মিথ্যা মামলা ও পার্বতীপুর উপজেলার বড়চন্ডীপুর (বারকোনা) গ্রামের নিরেন মার্ডী গংদের পৈত্রিক ভূমি ভূমিদস্যুদের দ্বারা দখলসহ আদিবাসীদের ওপর ধারাবাহিক মিথ্যা মামলা, উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে রাস্তাঘাটে মারপিট ও হত্যার হুমকি’র প্রতিবাদে দিনাজপুর প্রেসক্লাবে বুধবার (১৯ মে) দুপুর ১২.৩০ মিনিটে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ দিনাজপুর জেলা কমিটির উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

 

সংবাদ সম্মেলনে ভূমিদস্যু মৌলভী মো: মাহাবুবুর রহমান (৫৫) গং এর গোপনীয় লীজ ভিপি-০১(এল)/১৯৮০-৮১ বাতিলসহ নবায়নের নথি বাতিলের আবেদন এবং আদিবাসীদের জমি দখলের চেষ্টায় মাহাবুবুর রহমান গংদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা; নিরেন মার্ডী গং এর পৈতৃক সম্পত্তির মালিকানা সত্ব অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইনের মাধ্যমে ভিপি অর্ন্তভূক্তি থেকে অবমুক্ত করা; মানবাধিকার কর্মী ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেনসহ তার আদিবাসীদের সকল প্রকার হয়রানিমূলক মামলা থেকে অবিলম্বে অব্যাহতি প্রদান; সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সংকট নিরসনে পৃথক ও স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন করাসহ দীর্ঘকাল ধরে সরকারী খাস জমিতে বসবাসরত এবং চাষাবাদের জমি আদিবাসীদের নামে বন্দোবস্ত দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির জেলা সভাপতি শীতল মার্ডী বলেন, নিরেন মার্ডী গং বংশানুক্রমিকভাবে শত বছরেরও বেশি সময় ধরে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার বড়চন্ডীপুর (বারকোনা) গ্রামে বাস করে আসছেন। পার্শ্ববর্তী বড়চন্ডীপুর (ডাঙ্গা) গ্রামের ভূমিদস্যু মৌলভী মো: মাহাবুবুর রহমান (৫৫) গং, পিতা: মৃত. আব্দুল জব্বার বিগত ২০১৪ সালের পরে বারোকনা আদিবাসী গ্রামের মৃত: ভাইয়া বেসরা গংদের জমিজমা জালিয়াতি করে বসতবাড়ি, দোকানপাট ও মসজিদ নির্মান করে বসতি গড়েন। এরপর থেকেই নানাভাবে নিরেন মার্ডী গং এর জমি দখলের চেষ্টা করতে থাকেন। নিরেন মার্ডী ও তার ভাইদের পৈতৃক ০১ একর ২৫ শতক জমিতে বর্তমানে ৮টি পরিবারের বসতভিটা ও কৃষিজমি ভোগদখলে রয়েছে।

চতুর ভূমিগ্রাসী মৌলভী মোঃ মাহাবুবুর স্থানীয় ভূমি অফিসের কর্মচারীদের সহায়তায় জানতে পারেন, ১৯৮০-৮১ সালে নিরেন মার্ডী গং’দের এস.এ. রেকর্ডীয় ও ভোগদখলীয় সম্পত্তির সর্বমোট ০১ একর ২৫ শতকের- মধ্যে ০.৯৫ শতক জমি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ‘ক’ তফশীলে- মৃত: শুকি মাডী, পিতা: ল্যাডা মার্ডী, সাং: বড় চন্ডিপুর (বারোকনা) এর নামে অর্ন্তভূক্ত হয়েছে।

এই সুযোগটিই গ্রহন করে চতুর ভূমিগ্রাসী মৌলভী মো: মাহাবুবুর সরকার বাহাদুরকে ভুল বুঝিয়ে মোট ০.৯৫ শতাংশ জমি লীজ গ্রহন করেন (বাংলা সন ১৩৮৮-১৪২৩ পর্যন্ত)। পরবর্তীতে নিরেন মার্ডি গং জমি-জমার এই মারপ্যঁচ বুঝতে পেরে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর ২৮/৭/২০২০ তারিখে এবং দিনাজপুর জেলা প্রশাসক বরাবর ২০/০৯/২০২০ ইং তারিখে, মৌলভী মো: মাহাবুবুর রহমানের উক্ত লীজ- ভিপি ০১ (এল) ৮০-৮১ নং লীজ নবায়নের নথি বাতিলের আবেদন করেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পার্বতীপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি)-কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।

কিন্তু তৎকালীন পার্বতীপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহাঙ্গীর আলম জেলা প্রশাসকের উক্ত অফিস আদেশ অমান্য করিয়া এবং পক্ষপাতমূলক সরেজমিন তদন্ত পূর্বক পুনরায় মৌলভী মো: মাহাবুবুর রহমান কে সেই ০.৯৫ শতাংশ জমি লীজ প্রদান করেন (বাংলা সন ১৪২৭ পর্যন্ত) । কিন্তু বাস্তবে নিরেন মার্ডী গং যুগ যুগ ধরেই উক্ত জমি ভোগদখল করে আসছে এবং লীজকৃত জমির একাংশে নিরেন মার্ডীর বাড়ীসহ আরো ৪জন বিধাব মহিলার বসতবাড়ী রয়েছে যাহারা সকলেই ভূমিহীন। এবং আরো হতাশাজনক বিষয় এই যে, ০.৯৫ শতাংশের মধ্যে ০.৩৫ শতাংশ জমি ভিপি তালিকার মধ্যে না থাকলেও ঐ জমি মৌলভী মো: মাহাবুবুর রহমান’কে লীজ প্রদান করা হয়েছে।

ভূমিদস্যু মৌলভী মো: মাহাবুবুর রহমান উক্ত জমি ইতিপূর্বে গোপনে লীজ গ্রহন করলেও বাস্তবে কখনও ভোগদখল করতে পারেনি। মৌলভী মো: মাহাবুবুর রহমানের পক্ষে জমির দখল কখনও ছিল না বা বর্তমানেও নাই। লীজ গ্রহন করবার পর থেকেই মো: মাহাবুবুর রহমান নিরেন মার্ডী গং কে উক্ত জমি ছেড়ে দেবার জন্য বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও সন্ত্রাসী কায়দায় হুমকী প্রদর্শন করিয়া আসিতেছে। কিন্তু নিরেন মার্ডী গং তাদের পৈতৃক সম্পত্তিতে অব্যাহত চাষাবাদ করিয়া আসিতেছেন এবং বর্তমানেও ইরি ধানের আবাদ করে ঘরে তুলেছেন। অপরদিকে মো: মাহাবুবুর রহমান জমি জবর-দখল না করতে পারায় ক্ষিপ্ত হইয়া দিনাজপুর জেলা আদালতে নিরেন মার্ডী সহ মোট ১৪ জনকে আসামী করে বে-আইনিভাবে ধান কাটার অভিযোগে, ধারা- ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩৫৪/৩৭৯/৫০৬ (২)/১১৪ মতে মামলা করেন। মামলা নং- সি.আর-২৩৮/১০, তারিখ ১২/১০/২০২০ । মামলাটি বর্তমানে আদালতে চলমান রয়েছে। অতঃপর, আবারও ভূমিগ্রাসী মো: মাহাবুর রহমান গং আদিবাসীদেরকে হয়রানি করবার জন্য নিরেন মার্ডীকে প্রধান করে মোট ১৪ জনের নামে ফৌজদারী কার্য্যবিধি আইনের ১০৭/১১৪/১১৭(৩) ধারা মতে গুরুতর শান্তি ভঙ্গের আশংকায় আদালতে মামলা করেন। মামলা নং- ২১৬ ‘পি’/২০২০, তারিখ: ১৯/১০/২০২০ (সংযুক্তি: ০৯) । বিগত ২৫/১১/২০২০ ইং তারিখে নিরেন মার্ডী গং আদালতে হাজিরা দিলে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি পর্যবেক্ষণ করে বাদী মো: মাহাবুবুর রহমানের অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় বিজ্ঞ বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি খারিজ করে দেন।

সর্বশেষ ভূমিদস্যু মোঃ মাহাবুবুর রহমান সমতল আদিবাসীদের দাবি আদায়ের সবচেয়ে বড় সংগঠন, ‘জাতীয় আদিবাসী পরিষদ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন কে (১) নং আসামী করে ২২ জনের বিরুদ্ধে আবারও আদালতে ধান কাটার অভিযোগে মিথ্যা মামলা করেন। মামলা নং- সি.আর ১০৯/২১, তারিখ: ৫/৫/২০২১ (সংযুক্তি: ১১)।উল্লেখ্য, মহামান্য বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত (৫), দিনাজপুর মামলাটিকে এফ.আই.আর (ঋওজ) করে পরিচালনার জন্য থানাকে আদেশ দিয়েছে। মামলাটির দন্ডবিধিতে- ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩২৪/৩৫৪/৩৭৯/৫০৬ (২)/১১৪ ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে। নিরেন মার্ডী সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ সরেনের জামাই হওয়ায় এবং এই মামলায় নিরেন মার্ডী গংদরে সহযোগিতা করার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে ভূমিদস্যু মোঃ মাহাবুবুর রহমান এ মামলা করেছেন বলে মনে হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বাজাতীয় আদিবাসী পরিষদ দিনাজপুর জেলা কমিটির সহ সভাপতি শিবানী উরাও, পঞ্চগড় জেলা কমিটির সভাপতি সভাপতি শ্রী বুধরাই হেমরম, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী রবিন হেমরম, বাংলাদেশ আদিবাসী সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী বিশ্বনাথ সিং, ফুলবাড়ি আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি চুন্নু টুডু, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল টুডু, রানী হাঁসদা প্রমুখ।

আদিবাসী নিউজ

মন্তব্য করুন