রাজধানীর পল্লবী এলাকার একটি মাদ্রাসা থেকে গত ৩১ আগস্ট নিখোঁজ হয় সাজমিন আক্তার (১৩) নামে এক ছাত্রী। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, মেয়েটিকে জিনে নিয়ে গেছে।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে ওই ছাত্রীর বাবা শরীফ উল্লাহ বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান। মেয়েকে উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন তারা বাবা।

তিনি বলেন, ‘‘চার বছর ধরে আমার মেয়ে পল্লবীর বাউনিয়াবাঁধ জামিয়া ফোরকানিয়া তালিমিয়া মহিলা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। সে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত ৮ আগস্ট তাকে ছুটিতে বাসায় নিয়ে আসি এবং ২৭ আগস্ট ছুটি শেষে তাকে আবার মাদ্রাসায় দিয়ে আসি। ৩১ আগস্ট মাদ্রাসা থেকে ফোন করে মেয়ের নিখোঁজ সংবাদ দেওয়া হয়। এরপর আমি মাদ্রাসা গেটে গিয়ে নিরাপত্তা কর্মীর কাছে মেয়ের খবর জানতে চাইলে বলা হয়, মেয়েকে সকাল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর আমি মাদ্রাসার হুজুর ও আপাকে ফোন দেই। তারা একেক সময় একেক কথা বলছেন। প্রথমে বলেন, গেটে বাবার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে আর আসেনি। আবার জানায়, আমার মেয়ের সঙ্গে জিন আছে। তাকে জিনে নিয়ে গেছে। আবার বলে সে অসুস্থ, মাথা ঘুরে সিঁড়িতে পড়ে গেছে। এভাবে তারা একেকবার একেক তথ্য দিচ্ছেন। কোনো নির্দিষ্ট তথ্য দিতে পাচ্ছি না।’’

মেয়েটির বাবা জানান, ‘‘গত ১ সেপ্টেম্বর আমি পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। তবে এখনও আমার মেয়েকে উদ্ধার করতে পারনি পুলিশ। এর মধ্যে কয়েকটি নম্বর থেকে আমার কাছে পুলিশ পরিচয় দিয়ে টাকা চাওয়া হয়েছে। আমি আমার মেয়েকে উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাই।’’

এ বিষয়ে মাদ্রাসার শিক্ষক মাসুম আকবর বলেন, ‘‘মেয়েটি যখন নিখোঁজ হয় তখন আমাদের প্রিন্সিপাল হজে ছিলেন। সিসি ক্যামেরা মনিটরিং তার কক্ষ থেকে করা হয়। রুম পরিষ্কার করতে গিয়ে ক্লিনাররা সিসি ক্যামেরার সুইচ অফ করে রাখে। তাই সিসি ক্যামেরায় কিছু ধরা পড়েনি। তবে ঘটনার দিন (৩১ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একজন শিক্ষিকা তাকে গেট থেকে বের হতে দেখেছেন। তখন সে তার বাবার সঙ্গে দেখা করতে যায় বলে বের হয়ে যায়। এরপর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।’’

তিনি বলেন, আমরাও তার সন্ধান পেতে চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন এবং এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে।

জিনের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি না জিনের বিষয়টি কে বলেছে। তবে শুনেছি নিখোঁজ হওয়ার আগের রাতে সে এবং তার বান্ধবীরা ‘জিন’ সূরাটি পড়েছিল। আর সহপাঠীরা জানিয়েছে সাজমিন অসুস্থ ছিল।’’

এ বিষয়ে পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাহাউদ্দিন বাবলা ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘ইতোমধ্যে জিডিটি অপহরণ মামলা হিসেবে আমলে নেওয়া হয়েছে। আমরা সাজমিনের বান্ধবীর কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। সেখানে সে ক্ষমা চাওয়ার কথা লিখেছে।’’

ওই ছাত্রী জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে কি না, জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এখনই এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সে নিজের ইচ্ছাতেই চলে গেছে।

তবে, পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে ওই ছাত্রীকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে বলে জানান এসআই বাহাউদ্দিন।

ঢাকা ট্রিবিউন

মন্তব্য করুন