বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া, উজিরপুর ও গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে নির্বাচনোত্তর সহিংসতা ও নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার অসংখ্য সংখ্যালঘু নারী-পুরুষের কোটালীপাড়ার বিভিন্ন গ্রামে এসে আশ্রয় নেয়া অব্যাহত রয়েছে। কোটালী পাড়া পৌরসভা চেয়ারম্যান কামাল হোসেন জনকন্ঠকে জানান, ঐ সব এলাকার নির্যাতিত নারী-পুরুষ বুধবারও কোটালীপাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এসে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা আশ্রিত লোকজনকে বিভিন্ন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। বিপদে আপদে ভীত সন্ত্রত্র লোকজনকে অভয়বাণী শুনিয়ে যাচ্ছেন। তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন। এদিকে বুধবার দৈনিক জনকন্ঠে “দুটি জেলার ১৫ হাজার সংখ্যালঘু নারী-পুরুষ ঘরছাড়া। কোটালীপাড়ায় আশ্রয় গ্রহণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণের অভিযোগ”- শীর্ষক সংবাদটি প্রকাশিত হলে প্রশাসনের সর্বত্র ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়। জেলা প্রশাসক ইকরাম আহম্মেদ, পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল জলিল দুপুরে কোটালীপাড়ার রামশীল বাজারে আশ্রিতদের অবস্থা দেখার জন্য সেখানে যান এবং তাদের সঙ্গে আলাপ করে তাদের ওপর কিভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন হয়েছে সে কাহিনী শোনেন। জেলা প্রশাসক ইকরাম আহম্মেদ বুধবার দুপুরে রামশীল ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে বসে যখন নির্যাতিতদের কথা শুনছিলেন তখন বাইরে নির্যাতিত নারী-পুরুষ অপেক্ষা করছিল। জেলা প্রশাসক বেশ কয়েকজনের কাহিনী লিপিবদ্ধ করেন। আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউপির মহিলা মেম্বর শেফালী সরকার তার উপর অত্যাচারের কাহিনী বর্ণনা করে বলেন, গত ১ অক্টোবর রাতে বিএনপির কিছু সন্ত্রাসী তার কাছে ১লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে তার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেবে বলে তারা হুমকি দেয়। পরেরদিন চাঁদা নিতে এলে তিনি পালিয়ে আসেন। একই গ্রামের সুচিত্রাবাড়ৈ এবং বিচিত্রা সরকার জানান, তাদের মারধর করে বাড়িঘভেঙ্গে ফেলে ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ধানডোবা গ্রামের বকুল তালুকদার জানান, নির্বাচনের দিন আওয়ামী লীগের কর্মীদের খাবার দিয়েছিল বলে তার দুই ছেলে অবনী (১৮) ও অখিল (১৬) কে মারধর করে বিএনপি কর্মীরা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরেরদিন মালামালসহ ঘর ভেঙ্গে নিয়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আশ্রয় গ্রহনকারীজানান, বাকাল গ্রামের মেনাজ ফকির, লিটন ওঝা, রাংতা গ্রামের সবুজ হালদার, বাগদার সাবেক এক চেয়ারম্যান, হাফেজ গাইন, রাজিহার গ্রামের কামরুল ফকিরের নেতৃত্বে ঐ সব এলাকায় সন্ত্রাসী লুটপাট ও হামলা চলছে। এদিকে আশ্রিতদের নিরাপত্তার জন্য রামশীল বাজারে অস্থায়ী একটি পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে।
দৈনিক জনকন্ঠ, ১১ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন