বাংলাদেশে নির্বাচনোত্তর সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বিষয়টি অতঃপর গড়াল জাতিসংঘ ভবন পর্যন্ত। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন -হয়রানি বন্ধ, ক্ষমতাসীন জোট সরকারের শরিক তালেবান সমর্থক মৌলবাদী গোষ্ঠীর তৎপরতা নিষিদ্ধ এবং কারাবন্দী বিবেক শাহরিয়ার কবিরের মুক্তির দাবিতে সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরের সামনে পালন করা হয়েছে এক প্রতিবাদী বিক্ষোভ সমাবেশ, অনশন কর্মসূচী। এসব নির্যাতন বন্ধে বাংলাদেশ সরকারকে বাধ্য করতে জরুরী হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়ে সোমবারই একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিব কোফি আনানকে। অনশন পরবর্তী বক্তব্যে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং বিশ্ববাসীর উদ্যেগী ভূমিকা কামনা, শরণার্থী শিবির খুলে বাংলাদেশী দেশত্যাগী শরণার্থীদের আশ্রয়, খাদ্যের ব্যবস্থা করার জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। সমাবেশে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে তালেবান কানেকশন সম্পর্কে বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক অভিযোগের উল্লেখ করে বলা হয়, জামায়াত নেতা দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যই এর তাৎক্ষণিক প্রমাণ তুলে ধরেছে। এসব মৌলবাদী ঔদ্ধত্যের কারণে নির্বাচনের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-হয়রানি কমছে না। সর্বশেষ শাখারী বাজারের ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশ যেন আরেকটি মোল্লা ওমরের আফগানিস্তান হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য কাউন্সিল এই অনশন এবং প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচীর আয়োজন করে। এই প্রতিবাদ কর্মসূচীর বিস্তারিত খবর মঙ্গলবার ঢাকার মিডিয়ার কাছে এসে পৌঁছেছে। এদিকে সংখ্যালঘু নির্যাতন পরিস্থিতি সম্পর্কে পৃথক একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরকারী দুই কংগ্রেস সদস্যকে। কংগ্রেস সদস্য যোশেফ ক্রাউলি ও জেমস ম্যাকডারমটকে নানা ঘটনার তথ্যপঞ্জিকাসহ এই স্মারকলিপি দিয়েছে হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশী মাইনরিটিস (এইচআরসিবিএম) নামের এই সংগঠন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই সংগঠনটিও বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধের দাবিতে সেখানে জনমত সংগঠনের কাজ করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য কাউন্সিলের পক্ষে সিতাংশু গুহ মঙ্গলবার তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচীর বৃত্তান্ত জনকণ্ঠকে জানাতে গিয়ে বলেছেন, সেখানকার আরও ১৪টি সংগঠনও অনশনে শরিক হয়েছিল। কর্মসূচীতে প্রবাসী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী মুসলিম সদস্যও যোগ দেন। হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস সদস্যের কাছে দেয়া এক স্মারকলিপিতেও সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে তাদের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। এই স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন মৌলবাদী গ্রুপ সমর্থিত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার তিন মাসে বাংলাদেশ জুড়ে কমপক্ষে ৪০ লাখ সংখ্যালঘু নাগরিক ক্ষতিগ্রস্থ, কমপক্ষে ২ হাজার সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ঠাণ্ডা মাথায় চট্টগ্রামে অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যাকাণ্ড, সাংবাদিক-লেখক শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেফতার, মানবাধিকার কর্মী রবীন্দ্র ঘোষকে প্রাণনাশের হুমকি, চট্টগ্রামের রাউজানসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে থাকতে দেবার নামে নিয়মিত ভাড়া-চাঁদা ধার্যসহ নানা উদাহরণ উল্লেখ করে বলা হয়, এসবের কোন কোন ঘটনা এতটাই বীভৎস যে তা আফগানিস্তানের তালেবান মৌলবাদী সন্ত্রাসীদেরও হার মানিয়েছে।

দৈনিক জনকণ্ঠ, ১৬ জানুয়ারি ২০০২

মন্তব্য করুন