সিরাজগঞ্জের চৌহালি উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বরাঙ্গাইল কুয়েতপাড়া গ্রামে ৯ জুন মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশের ধাওয়ায় যমুনা নদীতে ডুবে এনতাজ আলী মন্ডল (৪২) নামের এক যুবকের করুণ মৃত্যু হয়েছে।

 

নিহত এনতাজ আলী মন্ডল পাশ্ববর্তী শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভারদিঘুলিয়া গ্রামের দুগুল মন্ডলের ছেলে।

এ ঘটনার ২ ঘণ্টা পর তার লাশ যমুনা নদীর হাটঘোরজান এলাকায় ভেসে উঠলে এলাকাবাসী উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।

ওই যুবক জুয়াড়ি বলে পুলিশ জানায়। অভিযানে পুলিশের হাতে আটক হন আরো দুই জুয়াড়ি চৌহালি উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রাব্বি ব্যাপারীসহ তিনজন। পুলিশ তাদের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে এলাকাবাসী জানান, চৌহালি উপজেলার হাট ঘোরজান সোলার পাওয়ার প্যানেলের পাশে একটি ভিটায় আব্দুস সালাম ব্যাপারী দীর্ঘ ৭ বছর ধরে পুলিশকে ম্যানেজ করে লাখ-লাখ টাকার জুয়ার আসর চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি থানার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার বিকেলে এসআই মাসুদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জুয়ারী এনতাজ আলী মন্ডলসহ সবাই দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ ঘোরজান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রাব্বি ব্যাপারী, জুয়ারী আবু বক্কার সিদ্দিক ও আমির হোসেনকে আটক করে। বাকিদের পুলিশ গ্রেপ্তারের জন্য ধাওয়া করে। এ সময় গ্রেপ্তার এড়াতে এনতাজ মন্ডল যমুনা নদীতে ঝাপ দিয়ে সাঁতার দিয়ে নদীর মাঝখানের চরে ওঠার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ নৌকা নিয়ে তাকে আবারও ধাওয়া করে। ফলে সে ভয়ে পানিতে তলিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করছেন, পুলিশ তাকে লগি দিয়ে আঘাত করে। ফলে সে পানিতে ডুবে যায়। এ সময় অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ হয়ে আটক ইউপি সদস্য রাব্বি ব্যাপারীসহ ৩ জুয়ারীকে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত নৌকা নিয়ে চলে যায়।

রাতে হাটঘোরজান এলাকায় যমুনা নদীতে এনতাজ মন্ডলের লাশ ভেসে উঠলে এলাকাবাসী উদ্ধার করে। খবর পেয়ে নিহতর স্বজনরা লাশ উদ্ধার বাড়ি নিয়ে কৈজুরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও মেম্বর শহিদুল ইসলামের সহযোগীতায় দাফন সম্পন্ন করে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী অভিযোগ করে জানান, পুলিশের অদক্ষতার কারণেই এই প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে। ৪ বছর আগেও এই জুয়া খেলা নিয়ে সংঘর্ষে জুয়া চালানোর মূল হোতা সালাম ব্যাপারীর ছোট ভাই আলো ব্যাপারী মারা গেছেন। তারপরও এই জুয়া বন্ধ হচ্ছে না।

এ বিষয়ে চৌহালি থানার ওসি রাশেদুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন,এ বিষয়ে নিহতর পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় নিহতর লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে নিহতর লাশের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

এ বিষয়ে কৈজুরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, নিহতর পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের একটি তদন্ত দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

দেশ রূপান্তর

মন্তব্য করুন