২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় সরাসরি জড়িত হরকাতুল জিহাদের সদস্য ইকবাল হোসেন জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিমের সাজা পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত আসামির সাজা পরোয়ানা জারি করেন।
এর ফলে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কার্যকর হলো। সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী শামসুদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি)মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি ইকবাল হোসেনকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহ আদালতে হাজির করে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ভোরে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে ইকবাল হোসেন জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিমকে গ্রেফতার করেন র্যাব সদস্যরা। র্যাবের ডিজি আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী জানান, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ইকবালের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে। র্যাব জানায়, ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় অংশ নেওয়ার পর ঝিনাইদহে চলে যায় ইকবাল। কয়েক মাস বাড়িতে থাকার পর সে আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় সে কখনও নিরাপত্তাকর্মী, কখনও রিকশাচালক, কখনও মেকানিক হিসেবে নিজের নাম পরিবর্তন করে কাজ করেছিল। সে ২০০৮ সালে দেশত্যাগ করে। প্রবাসে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় প্রথমে সেলিম এবং পরবর্তীতে জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করে। এক পর্যায়ে সে প্রবাসে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত হলে তাকে ২০২০ সালের শেষের দিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। দেশে ফেরত এসে জঙ্গি ইকবাল আত্মগোপনে থেকে সমমনাদের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করে।
জানা যায়, জঙ্গি ইকবাল এইচএসসি পাস। স্কুল ও কলেজে পড়ার সময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। ইকবাল ১৯৯৪ সালে কেসি কলেজ, ঝিনাইদহে ছাত্র সংসদে ছাত্রদলের নির্বাচিত শ্রেণি প্রতিনিধি ছিল। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত মালয়শিয়ায় প্রবাসী কর্মজীবী হিসেবে অবস্থান করে। দেশে ফিরে ইকবাল আইএসডি ফোন ও অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে। এসময় সে সর্বহারা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় রায় ঘোষণা করা হয়। পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এই রায় দেন। আদালত এ মামলায় ৪৯ জন আসামির মধ্যে ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। অপর ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।