নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় নড়াইলের তিন উপজেলা সদর, লোহাগড়া এবং কালিয়ায় এখন পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। যাদের আশি শতাংশই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য। বিএনপি, জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডাররা নৌকার ভোটার খুঁজে খুঁজে বাড়িঘরে হামলা, লুটতরাজ করছে। তাদের হামলা, আতঙ্ক সৃষ্টির কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের অনেকে এর মাঝে এলাকা ছাড়া হয়েছে। মানুষ আতঙ্কে আছেন আরেকটি কারণে। শেখ হাসিনা তাঁর বিজয়ী আসন ছেড়ে দিলে মুফতি শহিদুল আবার নির্বাচন করবে সেখানে। শহিদুল উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে তার নানান তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। তারা তালিকা তৈরি করেছে বেছে বেছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনকে শায়েস্তার। এই তালিকায় জনকন্ঠের নড়াইল প্রতিনিধি রিফাত-বিন-ত্বহার নামও আছে। মুফতি বাহিনীর তৎপরতায় স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হবার আরেকটি কারণ নড়াইলের পুলিশ ইতোমধ্যে খোলস পাল্টে ফেলেছে। তারা এর মাঝে হয়ে গেছে সাচ্চা বিএনপিপন্থী। জামাত জোট নির্বাচনে বিজয়ের পর থেকে প্রতিহিংসায় হামলার শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন এখন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। চাঁদার ভয়ে এলাকা ছেড়েছেন অনেকেই। অক্টোবরের ২ তারিখে কালিয়া বাজারের ব্যবসায়ী অপু দত্তের কাছে দাবি করা হয় চাঁদা। বিজয় উৎসবের নামে নিশিকান্তের দোকানে গিয়ে দাবি করা হয় দুই বস্তা চাল। নৌকায় ভোট দেয়ার অপরাধে কালিয়ার কালীনগর, লক্ষীপুর, চালনা গ্রামের সংখ্যালঘু হিন্দুদের মধ্যে ত্রাসের সৃষ্টি করে তাদের এক রকম বাড়ির বাইরে বেরুতে দেয়া হচ্ছে না। অক্টোবরের ৩ তারিখে কালিয়া বাজারে কুপিয়ে আহত করা হয় ব্যবসায়ী হারাণ চন্দ্র দাসকে। বর্তমানে সে খুলনার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন আছে। কুলসুর গ্রামের গোপেশ সাহা ও তার ছেলেকে পিটিয়ে আহত করেছে বিএনপি’র সন্ত্রাসীরা। ৫ অক্টোবর ছোট কালিয়ার নারায়ণ চন্দ্র মাঝিকে পিটিয়ে আহত করা হয়। অক্টোবরের ৬ তারিখে বিএনপির সন্ত্রাসীরা লোহাগড়ার লাউড়িয়া মাঝপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাবু সুনীল কুমার বিশ্বাসকে পিটিয়ে আহত করে। নৌকায় ভোট দেয়াকে তাঁর অপরাধ হিসাবে দেখানো হয়েছে। নড়াইলে সূত্র গুলো বলেছে-বিএনপি, জামায়াতের ক্যাডাররা যৌথভাবে তৈরি করেছে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের কয়েকটি সংগঠনের বেশ কিছু ব্যক্তির তালিকা।
দৈনিক জনকন্ঠ, ১১ অক্টোবর ২০০১