আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের বার্ষিক রিপোর্টে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ মাত্রার সহিংসতার অভিযোগ এনেছে। অ্যমনেস্টি তাদের ২০০২ সালের রিপোর্টে আরো অভিযোগ করেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরা এখানে শাস্তির হাত থেকে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। ইউএনবি। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীতে প্রকাশিত সংস্থার বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়, গত ২০০১ সালে নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক সহিংতায় ১৫০ জন নিহত হয়েছে। ২০০১ সালে সংঘটিত ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রিপোর্টে আরো বলা হয়, ধর্মীয় দলগুলো ফতোয়া নিষিদ্ধ করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় পাল্টে দেওয়ার আবেদন জানায়। প্রকাশিত রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে অ্যমনেস্টির বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের পরিচালক গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, এখানে নারীদের ওপর ঘরে-বাইরে সহিংস আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। রিপোর্ট প্রকাশের সময় সংস্থার বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাসরিন সুলতানাও উপস্থিত ছিলেন। প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছরের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের আগে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১৫০ জন নিহত এবং হাজার হাজার আহত হয়। বিগত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনেছে এবং সংসদ বয়কট করছে। এতে বলা হয়, নির্বাচনের পর পর অনেক হিন্দু পরিবারই সহিংস আক্রমণের শিকার হয়। নবেম্বর মাসে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন বিখ্যাত ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। পুলিশ হিন্দু সম্প্রদায়কে রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু বেশির ভাগ দুষ্কৃতিকারীই বিচারের হাত থেকে রেহাই পেয়ে যায়। নবেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে সরকারি তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হলেও এ যাবৎ পর্যন্ত তার কোনো খবর নেই। নভেম্বর মাসে আইনি সাহায্য সংস্থা আইন ও সালিস কেন্দ্রের হাইকোর্টে পিটিশন দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সরকারকে কেন হিন্দুদের রক্ষা করা হয়নি মর্মে ১ মাসের মধ্যে ব্যাখ্যা দেওয়ার আদেশ দেয়। কিন্তু বছরের শেষ নাগাদও তার কোনো উত্তর মেলেনি। রিপোর্টে বলা হয়, ২২ নবেম্বর পুলিশ ভারত থেকে ফেরার পর বিখ্যাত লেখক শাহরিয়ার কবিরকে আটক করে। ডিসেম্বর মাসে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রকাশ করেনি। ভারতে পালিয়ে যাওয়া হিন্দুদের ব্যাপারে অনুসন্ধানের কারণেই কেবল তাকে আটক করা হয় বলে রিপোর্টে মন্তব্য করা হয়। রিপোর্টটি আরো বলছে, অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও হামলার শিকার হয়েছে। ২০০১ সালের জুন মাসে গোপালগঞ্জের বানিয়ারচরে একটি গির্জায় বোমা হামলায় ১০ জন নিহত এবং ২০ জন জখম হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে উপজাতিদের সঙ্গে বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। মে মাসে জুম্ম জনগোষ্ঠীর ৩ মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়। কিন্তু কোনো ধর্ষকের বিচার হয়নি।
ভোরের কাগজ, ২৯ মে ২০০২