সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বরিশাল-১ আসনের (গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার) সংখ্যালঘু বাসিন্দারা এখনও নানা ধরনের অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নির্বাচনের আগে থেকেই আওয়ামী লীগ-বিএনপির কতিপয় সন্ত্রাসী এদের ওপর নানা ধরনের নির্যাতন শুরু করে। উভয় গ্রপের কঠোর নির্দেশ ছিল তাদের প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে, না হলে নিস্তার নেই। আওয়ামী লীগ আমলে গত ৫ বছরে এ অঞ্চলের সংখ্যালঘুরা ছিল চাপের মুখে। তখন গৌরনদী বন্দর, চরকি বন্দরের হিন্দু ব্যবসায়ীদের নিয়মিত চাঁদা প্রদান করে সন্তুষ্ট রাখতে হতো আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতাকে। আগৈলঝাড়ায় এক প্রভাবশালী নেতার নির্দেশে হিন্দু ব্যবসায়ীরা গোপনে চাঁদা তার বাড়ি দিয়ে আসত। সংখ্যালঘুদের বহু বাড়িঘর দখল হয়েছে বিগত সরকারের আমলে। হিন্দু পরিবারের বহু যুবতী নারীর সম্ভ্রম লুণ্ঠিত হয়েছে বিগত সময়। গৌরনদীর বার্থীতে ছাত্রলীগের এক ক্যাডার গত বছর একটি শীল পরিবারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা লুট করেছিল এবং ওই পরিবারের এক যুবতীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরবর্তী সময়ে ৬ সদস্য বিশিষ্ট ওই পরিবারের লোকজনের ভাগ্যে কি ঘটেছে আজ পর্যন্ত কেউ জানতে পারেনি। হাবুল পদা নামের ছাত্রলীগের ওই ক্যাডার পরবর্তী সময়ে একই এলাকায় অন্য একটি হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণ করত তার মা-বাবাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দিনের পর দিন ওই বাড়িতে রেখেই। কিন্তু অসহায় মা-বাবা সন্ত্রাসীদের ভয়ে কোন কিছু করতে সাহস পায়নি। এভাবে নানা অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়। ফলে তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অনেকেই প্রকাশ্যে যোগ দেয় বিএনপিতে। গত ৭ সেপ্টেম্বর গৌরনদী কলেজ মাঠে খালেদা জিয়ার জনসভায় বহু হিন্দু লোকজন বিএনপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন। এদের মধ্যে সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নিরোদ বরণ হালদার অন্যতম। নির্বাচনের আগে তার বাড়িতে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা হামলা চালায়। বিএনপি করার অভিযোগে আগৈলঝাড়া পিসি গার্লস হাইস্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক গণেশ চন্দ্র রায়, রাজহার ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য অনন্ত কুমার মণ্ডল, আগৈলঝাড়া কলেজের সহকারী অধ্যাপক শচীন্দ্র নাথ হালদারের বাড়িতে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ কর্মীরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। হিন্দু অধ্যুষিত আগৈলঝাড়ার ৯টি ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী প্রার্থীর চেয়ে বিএনপির প্রার্থী আগের চেয়ে অধিক ভোট পেয়েছেন। কিন্তু হিন্দু অধ্যুষিত ঐসব কেন্দ্রের আগৈলঝাড়া বিএইচপি একাডেমী কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থী জহিরউদ্দিন স্বপন পেয়েছেন ১২৭২ ভোট, আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ পেয়েছেন মাত্র ৪৪৩ ভোট। ছয়গ্রাম সরকারি বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপির ৮২৬, আওযামী লীগ প্রার্থী ৬৮২ ভোট। তারারভিটা কেন্দ্রে বিএনপি ১৪৬৪, আওয়ামী প্রার্থী ৮৮৯ ভোট। রাংতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি ১৭৮৭, আওয়ামী লীগ প্রার্থী পান ১১৬৩ ভোট। মধ্য মিহিপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থী পেয়েছেন১০৫০, আওয়ামী লীগ ৭৭৯ ভোট। উত্তর মিহিপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি ১০৭৩, আওয়ামী লীগ ৬৮০ ভোট পেয়েছে। ওই ৯টি কেন্দ্রে ভোটারদের উপিস্থিতির হার ছিল ৭৮ ভাগ। নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনে এ অঞ্চলের হিন্দুরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে ধানের শীষে ভোট প্রদান করেছেন। কিন্তু নির্বাচনের পর পর কতিপয় সন্ত্রাসী নৌকায় ভোট প্রদানের অজুহাতে গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার সংখ্যালঘুদের নানা ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করে। এর ফলে সংখ্যালঘু লোকজন ক্ষুব্ধ হয়েছে। এ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য জহিরউদ্দিন স্বপন কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যারা সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে কতিপয় নব্য বিএনপি কর্মী সংখ্যালঘুদের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করছে। ফলে তারা এখন আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ প্রাণের ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
যুগান্তর, ১০ অক্টোবর ২০০১