বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ৪নং কুরুকপাতা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সাথীরাম ত্রিপুরা পাড়ায় নির্মানাধীন ১টি গীর্জা ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে লামা বন বিভাগ। এছাড়া এলাকায় ঠাণ্ডাঝিরি জিরা ত্রিপুরা পাড়ায় ২টি ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১) সকাল সাড়ে ১১টার সময় লামা বনবিভাগ থেকে পাঠানো বন টিমের স্পেশাল টহল বাহিনীর প্রধান (ওসি) মো. আতিকুল ইসলাম ও মাতামুহুরি সংরক্ষিত বনের রেঞ্জ কর্মকর্তা জহির্ উদ্দিন মোহাম্মদ মিনার চৌধুরীর নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সাথীরাম ত্রিপুরা পাড়ার কার্বারি ও পাড়াবাসী।
সাথীরাম ত্রিপুরা পাড়ার মাইকেল ত্রিপুরা, আব্রাহাম ত্রিপুরা, জগত ত্রিপুরা, পিতর ত্রিপুরা ও পাড়া কার্বারী সাথীরাম ত্রিপুরা বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার সময় লামা বনবিভাগের মাতামুহুরি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা জহির উদ্দিন মোহাম্মদ মিনার চৌধুরী ও লামা বন বিভাগ থেকে আগত বনটিমের বিশেষ টহল বাহিনীর প্রধান ওসি মো. আতিকুল ইসলামসহ আরো ৮ থেকে ১০ জন লোক এসে আমাদের কিছু না জানিয়ে পাড়াবাসীর একমাত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গীর্জাটি ভেঙে দিয়েছে। পুরাতন বাঁশের বেড়ার গীর্জাটি নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছিল।
তারা বলেন, বনবিভাগের লোকজন যখন এই ভাংচুর চালাচ্ছিল তখন পাড়ার বয়স্ক লোকজন জুমের খেতে কাজে গিয়েছিলেন। পাড়ায় যখন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকজন ছিলে না তখনই বন বিভাগের লোকজন এসে আমাদের গীর্জাটি ভেঙে দিয়েছে। আমরা ঘটনাটির বিষয়ে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সায়েদ ইকবাল, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মংবাচিং মার্মা ও জেরা পরিষদ সদস্য ধুংড়ি মং মারমাকে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েছি।
পাড়া কার্বারি সাথীরাম ত্রিপুরা বলেন, বিদ্যামনি ত্রিপুরা পাড়া ও সাথীরাম ত্রিপুরা পাড়ার লোকজনের একমাত্র গীর্জা হলো এটি। দুই পাড়ার লোকজন গীর্জায় এসে প্রার্থনা করে থাকেন। আগের বাঁশের বেড়ার ছিল গীর্জাটি। সে কারণে আমরা দুই পাড়ার লোকজন দীর্ঘ ১৫ বছর অর্থ সঞ্চয় করে পাড়া থেকে দশহাত দূরে নতুন করে এ গীর্জাটি তৈরি করেছি।
এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য ধুংড়ি মং মারমা জানান, আলী কদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে অবস্থিত সাথীরাম ত্রিপুরা পাড়ায় নির্মাণাধীন একটি গীর্জা ও ২টি ঘর গত বৃহস্পতিবার লামা বন বিভাগের লোকজন এসে ভেঙে দিয়েছে। তাদের সাথে ছিলেন মাতামুহুরি রেঞের রেঞ্জ কর্মকর্তা। বিষয়টি খুব দঃখজনক। আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং পাড়াটি অনেক পুরাতন। তারা নির্মাণাধীন গীর্জা ভেঙে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে।
আলীকদম ত্রিপুরা কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিলিপ ত্রিপুরা জানান, গীর্জা ভেঙে বন বিভাগ আমাদের খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। আমরা এ গর্হিত ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
বিষয়টি নিয়ে কুরুকপাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বনবিভাগের নেতৃত্বে গীর্জা ভাঙা কোনভাবেই ঠিক হয়নি। তারা অন্যায় করেছে। তারা সঠিক স্থানে কাজ করছে না। মাতামুহুরি রিজার্ভ এলাকায় প্রচুর পরিমাণে পাথর উত্তোলন, বালু উত্তোলন হচ্ছে সেদিকে অভিযান না চালিয়ে তারা অভিযান নাম করে এখানে এসে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে লাম বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কায়সার জানান, ‘আমরা কোন গীর্জা ভাঙিনি। আমরা সংরক্ষিত বনে অবৈধ স্থাপনা ভেঙেছি মাত্র। মাতামুহুরি রিজার্ভে কোন স্থাপনা তৈরি করতে বন বিভাগের অনুমতি লাগে। তারা কোন আমার কাছ থেকে কোন অনুমতি নেয়নি’।
তিনি এ সময় আরো জানান, ‘তিন চারটি ত্রিপুরা ঘর নিয়ে গীর্জা তৈরি করার কোন প্রয়োজন নেই। ঐখানে কোন গীর্জা নেই, আছে “সন্ত্রাসী”।
এ ব্যাপারে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সায়েদ ইকবাল বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।