চট্টগ্রামের বিভিন্নস্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর নির্বাচন-পরবর্তী হামলা, লুটপাট, নিপীড়ন ও নির্যাতন মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও সন্দ্বীপের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। কয়েকটি এলাকায় হামলা-নির্যাতনের ঘটনা ৭১ সালের বর্বরতাকেও হার মানায়। জীবন বাঁচাতে অগণিত মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে। পুরুষশূন্য গ্রামে সন্ত্রাসীরা নারী ও শিশুকে রেহাই দিচ্ছে না। নির্বাচন পরবর্তী রাঙ্গুনিয়ায় মোট ৪৫ জন লোক আহত হয়েছেন। অর্ধশতাধিক বাড়িঘরে ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে। সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা রাঙ্গুনিয়ার ধামাইরহাট এলাকায় আস্তানা গেড়েছে। ধামাইরহাটের ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে সন্ত্রাসীরা মোটা অংকের চাঁদা আদায় করেছে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে চলে অত্যাচার, নির্যাতন। চাঁদা না দেয়ায় ১২অক্টোবর ধামাইরহাট থেকে বাড়ি ফেরার পথে স্বপন বড়ুয়া (২৫) নামে এক যুবকের উপর সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হামলা চালায়। গুরুতর আহত স্বপন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। রাঙ্গুনিয়ার শান্তিনিকেতন, ফুলবাগিচা, মধ্যপারুয়া, সাহাব্দীনগর-সহ কয়েকটি গ্রামে প্রতিনিয়ত নির্যাতন চলছে। ১৪ অক্টোবর রাতে শান্তিনিকেতন এলাকায় সন্ত্রাসীরা একটি দুর্গাপ্রতিমা ভেঙ্গে ফেলে। উত্তর রাঙ্গুনিয়ার দোকানদার মিলন বিশ্বাস, কেশব দে, বিশ্বজিৎ দাশ, ইউপি মেম্বার সুবিমল বিশ্বাস অভিযোগ করেন যে, ৩অক্টোবর থেকে এই এলাকায় বিভিন্ন দোকান থেকে সন্ত্রাসীরা জোর করে চাঁদা আদায় করেছে। রাঙ্গুনিয়ার রানীরহাট, গাবতল, বগাবিল, সাদেক নগর ও মধ্যঘাঘড়া এলাকায় সন্ত্রাসীরা ব্যবসায়ী ও সাধারণ লোকের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে ও অমানুষিক নির্যাতন চালাচ্ছে। অপরদিকে সন্দ্বীপের পশ্চিম সারিকইত, পশ্চিম মাইটভাঙ্গা, চৌধুরীপাড়া, মুসাপুরধাম, সেনেরহাট এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অমানুষিক নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। জেলেপাড়ায় সন্ত্রাসীরা মোটা অংকের চাঁদা আদায় করেছে। সন্দ্বীপের চেউরিয়া গ্রামের একটি মন্দিরও ভেঙে ফেলা হয়। সন্দ্বীপে সন্ত্রাসীদের ভয়ে পালিয়ে যাওয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরের টিনের ছাউনি পর্যন্ত সন্ত্রাসীরা খুলে নিয়েছে। এখানে ধর্ষণের নারকীয় ঘটনাও ঘটেছে। নৌকায় ভোট দেয়াই এদের অপরাধ, পুলিশ প্রশাসন একেবারে নীরব। রাউজান প্রতিনিধি জানান, ১ সপ্তা ধরে বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা নির্বিচারে নির্যাতন চালাচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সাবেক এনডিপি ক্যাডার ফজল হকের বাহিনী নির্বিচারে অত্যাচার-নির্যাতন চালায়। রাউজানের ২৫টি বাড়িঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। সন্ত্রাসীরা বাগোয়ান ইউনিয়নের সুনীল চৌকিদারের বাড়ি, উত্তর রাউজানের কেউটিয়া গ্রামে নির্বাচনের আগের দিন পুলক ভট্টাচার্যের বসতবাড়ি ও কমলপতি গ্রামের অরুণ সরকারের বাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ডাবুয়া ইউনিয়নের রামনাথপাড়ায় হামলা ও ডাবুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাধন চক্রবর্তীকে বেদম মারধর করে। এসকল হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় থানায় সুনির্দিষ্ট মামলা হলেও পুলিশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে।
আজকের কাগজ, ১৯ অক্টোবর ২০০১