কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশ ও বিজিবির পৃথক কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক রোহিঙ্গা নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। পুলিশ ও বিজিবির দাবি, নিহত তিনজনই ইয়াবা ব্যবসায়ী ছিলেন।
পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাটি ঘটে গতকাল শনিবার রাত একটার পর। আর আজ রোববার ভোররাত চারটার দিকে বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হয়। এ তথ্য প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস ও টেকনাফ-২ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর শরীফুল ইসলাম জোমাদ্দার।
পুলিশের দাবি, বন্দুকযুদ্ধে নিহত দুজন হলেন টেকনাফের হ্নীলার আলী আকবরপাড়ার মাহামুদুর রহমান (২৮) ও হোয়াইক্যং নয়াপাড়ার মোহাম্মদ আফসার (২৫)। তাঁদের বিরুদ্ধে মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ৬টি এলজি, ১০ হাজার পিস ইয়াবা বড়ি ও ১৮টি তাজা কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। এ সময় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক বিশ্বাস, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. আমির ও কনস্টেবল মো. শরিফুল আহত হয়েছেন।
সি প্রদীপ কুমার দাস বলেন, গতকাল রাত একটার দিকে উপজেলার হ্নীলার মৌলভীবাজার এলাকায় গেলে ইয়াবা কারবারিরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও প্রায় ৫০টি গুলি চালায়। একপর্যায়ে ইয়াবা কারবারিরা পিছু হটলে ঘটনাস্থলে দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সময় ৬টি এলজি, ১০ হাজার পিস ইয়াবা বড়ি ও ১৮টি তাজা কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। গুলিবিদ্ধ দুজনকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের কক্সবাজার নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ দুটি সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
বিজিবির দাবি, বন্দুকযুদ্ধে নিহত নারী হলেন মিয়ানমারের মংডু শহরের রাম্বিবিল গ্রামের বদরুল ইসলামের স্ত্রী রুমানা আক্তার (২০)। তিনি টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরের সি-৬ ব্লকের ৪০ নম্বর কক্ষে বাসিন্দা। ঘটনাস্থল থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবা বড়ি ও ৩টি লোহার ধারালো কিরিচ উদ্ধার করা হয়।
টেকনাফ-২ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর শরীফুল ইসলাম জোমাদ্দার বলেন, আজ ভোররাতে একটি টহল দল হ্নীলার দমদমিয়া ওমরখাল এলাকায় টহলে ছিল। এ সময় নৌকায় করে কয়েকজন লোককে নাফ নদী দিয়ে ওমরখালের ঢোকার চেষ্টা করতে দেখা যায়। ওই লোকদের থামার নির্দেশ দিলে তারা টহল দলের ওপর গুলিবর্ষণ ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে। এতে বিজিবির একজন সদস্য আহত হন। এ সময় আত্মরক্ষার্থে বিজিবির সদস্যরা পাল্টা গুলি চালান। উভয় পক্ষের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ মিনিট গুলিবিনিময় চলে। অস্ত্রধারী চোরাকারবারিরা গুলি করতে করতে খালের কিনারা দিয়ে পালিয়ে যায়।
মেজর শরীফুল বলেন, গুলির শব্দ থামার পর টহল দলের সদস্যরা ওই এলাকায় তল্লাশি করলে একজন নারীকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত অবস্থায় নৌকায় পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁর সঙ্গে থাকা ব্যাগের ভেতর থেকে ১০ হাজার ইয়াবা বড়ি ও ঘটনাস্থল থেকে লোহার তিনটি ধারালো কিরিচ উদ্ধার করা হয়। নৌকাটি জব্দ করা হয়েছে। নিহত নারীর ভ্যানিটি ব্যাগের ভেতরে একটি আইডি কার্ড পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে তাঁর পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ব্যাপারে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
গত বছরের ৪ মে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়। এ নিয়ে র্যাব-পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ ও এলাকায় মাদকের প্রভাব বিস্তারের ঘটনায় কক্সবাজার জেলায় ৭৭ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১১ জন রোহিঙ্গাসহ টেকনাফে ৫৩ ও উখিয়ায় ২ জন নিহত হন।