আওয়ামী লীগ করার দায়ে নির্যাতনের ভয়ে পালিয়ে থেকে স্কুলের চাকরিটি খোয়ালেন প্রবীণ ইংরেজি শিক্ষক জগদীশ মণ্ডল। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, বিএনপি নেতা এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্যদের কাছে ধরণা দিয়েও চাকরি ফিরে না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অন্যদিকে উপযুক্ত শিক্ষকের অভাবে ইংরেজির পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে ঐ স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের। জানা যায়, গত ১ অক্টোবরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাগেরহাট সদর উপজেলার সায়েড়া মধুদিয়া গ্রামের বিএনপি ক্যাডাররা আওয়ামী লীগ সমর্থক সংখ্যালঘু যুবক বিকাশ পালকে শিক্ষক জগদীশ মণ্ডলের বাড়ির সামনে মারপিট করে। তাদের কেউ কেউ ঐ সময় জগদীশ মণ্ডলেরও খোঁজ করে। এ জন্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে জগদীশ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন এবং একই কারণে তার কর্মস্থল সায়েড়া মধুদিয়া মাধ্যমিক স্কুলে হাজির হতে পারেননি। এরই মধ্যে সন্ত্রাসীরা তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে পল্লব মণ্ডলের সাইকেল ছিনতাই করে এবং অপর ছেলে খোকন মণ্ডলকে গ্রামছাড়া করে। গত ২৮ মার্চ স্থানীয় একটি পত্রিকায় স্কুলের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রচারের মাধ্যমে জগদীশ মণ্ডলকে ২০০১ সালের ২ অক্টোবর থেকে স্কুলে অনুপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করে এক সপ্তাহের মধ্যে কাজে যোগদান করতে এবং এর অন্যথা হলে তার পদটি শুন্য ঘোষিত হবে বলে বলা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে আরো ২ বার তাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করা হয়। এই বিজ্ঞপ্তি দেখে তিনি প্রায় ৬ মাস পর বাড়ি ফিরে আসেন এবং স্কুল কমিটির সদস্য জনৈক বিএনপি কর্মীর সঙ্গে দেখা করেন। ঐ সদস্য এ ব্যাপারে তার কিছু করার নেই বলে জানালে তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা যুবদলের সভাপতি ফকির তরিকুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেন। তরিকুল ইসলাম একটি চিঠি দিয়ে তাকে পাঠান স্কুল কমিটির সভাপতি গনি মোল্লার কাছে। কিন্তু তার কাছে গিয়েও কোনো কাজ হয়নি। এদিকে স্কুলের ৫০/৬০ জন ছাত্রছাত্রী তাদের প্রিয় শিক্ষক জগদীশ মণ্ডলকে ফিরিয়ে আনতে তার বাড়ির দিকে যাত্রা করলে স্কুল কমিটির সদস্য ও বিএনপি সমর্থক রুহুল আমিন ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে চাকরিটি ফিরে না পেয়ে জগদীশ মণ্ডল পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অন্যদিকে উপযুক্ত শিক্ষকের অভাবে ̄স্কুলে ইংরেজি বিষয়ে পাঠদানও ব্যাহত হচ্ছে। সর্বশেষ জানা গেছে, বিএনপি প্রভাবিত ম্যানেজিং কমিটি জগদীশ মণ্ডলকে চাকরিতে যোগদান করতে না দিয়ে তার পদে নতুন শিক্ষক নিয়োগদানে সচেষ্ট রয়েছে।

ভোরের কাগজ, ৩০ এপ্রিল ২০০২

মন্তব্য করুন