আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও তাদের বাড়িঘরে লুটপাট ও ভাঙচুর অব্যাহত রয়েছে। কুষ্টিয়া, পটুয়াখালী, বাগেরহাট ও নলছিটি থেকে সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর অব্যাহত হামলা ও আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে নির্মীয়মান প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। অনেকস্থানেই এই পরিবারগুলোর নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট এবং ভয়ভীতির কারণে এবার কুষ্টিয়া-৩ আসনের হরিনারায়ণপুর ইউনিয়নের প্রায় ৩০০ সংখ্যালঘু পরিবার ভোটদান থেকে বিরত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত ১৪ সেপ্টম্বর এলাকায় আওয়ামী লীগ ও চারদীয় জোটের সমর্থকদের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর একদল সন্ত্রাসী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়িতে কয়েক দফা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে।

এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীরা গভীর রাতে তাদের বাড়িতে এসে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য বিভিন্ন রকম হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। সন্ত্রাসীরা তাদের বলেছে ভোট দিতে গেলে নির্বাচনের পরের দিন তাদের ধরে ধরে জবাই করা হবে। এদিকে সন্ত্রাসীদের ভয়ে হরিনারায়ণপুরের শিবপুর গ্রামে অধিকাংশ পুরুষই বর্তমানে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে জানা গেছে।

গত শুক্রবার রাতে মোল্লাহাট উপজেলার আরজুরি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার দত্তডাঙ্গা গ্রামের অমলকৃষ্ণ রায়ের বাড়িতে কালী মন্দিরে বিএনপি কর্মীরা হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করেছে। এ ব্যাপারে মোল্লাহাট থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এদিকে জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ যৌথভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতিসহ সংশি−ষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়ে জেলার চারটি আসনের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও অবাধ ভোটপ্রদান নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছে।

খুলনার অতিরিক্ত উপ মহাপুলিশ পরিদর্শক এ কে এম এনায়েতউল্লাহ দেওয়ান গতকাল শনিবার সকালে বাগেরহাটে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করেছেন। তিনি এ জেলায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন।

জেলার বাউফলের ধুলিয়া, কেশবপুর, কালিশুরী, কাছিপাড়া গ্রামের সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করায় সংখ্যালঘুদের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে। আতঙ্কিত কয়েকজন ভোটার জানান, তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ ও প্রশাসনকে জানানোর পর একটি রাজনৈতিক দলের কর্মীরা আরও বেশি করে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ফলে তারা আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।

জেলার নলছিটি উপজেলার পারইকরণ গ্রামে একটি সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর গত শুক্রবার রাতে হামলা চালালে আটজন আহত হয়। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় কল্পনা রাণী (৫০), বীরেন চন্দ্র দাস (৫২), দুলাল (২৫) ও সঞ্জীব (২৫)কে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় ওই রাতেই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।

প্রথম আলো, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০১

মন্তব্য করুন