টঙ্গীবাড়ী বাজারের বাসুদেব মন্দির এখন খৈলভুসির দোকান হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শতাব্দীপ্রাচীন এই বাসুদেব মন্দির বেদখল হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। কিন্তু প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছে না ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সত্ত্বেও। টঙ্গীবাড়ী বাজারের দক্ষিণ পাশে টঙ্গীবাড়ী মৌজার আরএস ২৪৫ নং দাগের ১ নং খতিয়ানে এই মন্দিরটি। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে এযাবতকালের সকল রেকর্ডেই এই ২ শতাংশের ভূমিটুকু দেবস্থান হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এন্তাজ উদ্দিন বেপারী নামের জনৈক ব্যক্তি এই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে জোট সরকারের সন্ত্রাসীদের নিয়ে সম্প্রতি দখল করে নেয়। সরকারী অনুদানে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের চাঁদায় এই ভূমিতে নির্মিত তিন তলা ফাউন্ডেশনের নবনির্মিত এক তলা বাসুদেব মন্দিরটি দখলের পর এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসাবে চলছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই মন্দিরটি দখলের পরপরই সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মালিকানা দাবি করে দখলকারী একটি মামলা রুজু করে (মামলা নং-৫৬/২০০১)। কিন্তু এই মামলাটি গত ২৩ এপ্রিল খারিজ হয়ে যায়। এতেও দখলকারীরা মন্দিরের দখল ছাড়েনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও দখলকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছিল (মামলা নং-৪০/২০০০)। সেটিও আদালত খারিজ করে দেয়। পরে ২০০০ সালের ৭ ডিসেম্বর ১ম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে ‘বাসুদেব মন্দিরে’র নামে সরকারী সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেন। এর পরই সরকারী অনুদানের মাধ্যমে বাসুদেব মন্দির-এর নিজস্ব পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। মন্দির কমিটির সভাপতি মহাদেব চন্দ্র গোপ আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন, এক শ’ ৭৪১ ৭৪২ ৩৭১বছরেরও আগ থেকে এই ভূমিতে পূজা-অর্চনাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালিত হয়ে আসছিল। সেই মন্দিরের ভবন এখন বেদখল গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই। এ ব্যাপারে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্যপরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট অজয় চক্রবর্তী রবিবার জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, একটি চক্র নানাভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর, এমনকি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও হামলা ও দখলকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, টঙ্গীবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী বাসুদেব মন্দির বেদখল হওয়ার পরও প্রশাসন নীরব। তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অতিসত্বর দখলমুক্ত করে এই বাসুদেব মন্দির হিন্দু সম্প্রদায়ের হাতে তুলে দেয়ার জোর দাবি জানান।

দৈনিক জনকণ্ঠ, ২০ মে ২০০২

মন্তব্য করুন