ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৫ জানুয়ারি রোববার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। জোবাইদা নাসরীন ওই হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষক।
এ ঘটনায় তিনি সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকসহ হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শাড়ি বিতরণ নিয়ে রোববার সন্ধ্যায় হল শাখা দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। মারামারি থামাতে এগিয়ে যান অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন। ওই সময় তাকেও মারধর ও লাঞ্ছিত করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, শাড়ি নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারি অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু হলের হাউজ টিউটর হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো কেউ আক্রান্ত হলে তাকে সেভ করা। কে কোন দল করে, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। কিন্তু সেখানে একজন শিক্ষক হিসেবে ছাত্রীরা আমার গায়ে হাত তুলেছে।
ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে তিনি বলেন, তাদের মারধরের কারণে আমার ঘাড় ফুলে গেছে এবং আমার পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা। আমি এখন চিকিৎসাধীন। প্রশাসনের কাছে বিচার দিয়েছি। আমি এ ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার ও নিরাপত্তা চাই।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাকিয়া পারভীন বলেন, আমার কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এটি উপাচার্যের কাছে পাঠানো হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’
এ বিষয়ে ঢাবি প্রক্টর গোলাম রব্বানী যুগান্তরকে বলেন, ‘অধ্যাক জোবাইদা নাসরিনকে মারধর ও লাঞ্ছনার ঘটনায় তদন্ত কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’
এ বিষয়ে উপচার্য অবগত আছেন। তিনি এটিকে গুরুত্বসহকারে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান প্রক্টর।
প্রসঙ্গত ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শাড়ি বিতরণ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে রোববার দুই পক্ষে মারামারির ঘটনা ঘটে।
এতে ছাত্রলীগের হল সংসদের বহির্ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক পাপিয়া আক্তার, হল সংসদের সমাজসেবা সম্পাদক ইসরাত জাহান ইতি ও মিলি রাণী আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মীদের মধ্যে শাড়ি বিতরণ করেন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রওনক জাহান রাইয়ান।
ওই সময় ছয়জন শাড়ি না পেয়ে রুমে চলে যান। হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি সালসাবিল খান তাদের ডেকে ছয়টি শাড়ি দেন। এতে ক্ষুব্ধ হন রাইয়ান। পরে তাদের দুপক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
এরপর প্রায় ঘণ্টাখানেক স্লোগান-পাল্টা স্লোগান ও দফায় দফায় মারধরের ঘটনা চলে।
রওনক জাহান রাইয়ান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের অনুসারী। আর সালসাবিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।