নির্বাচনোত্তর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, বাড়িঘর লুটপাট অব্যাহত থাকায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে পূজার আয়োজন মাঝপথে থেমে গেছে। অনেক সংখ্যালঘু পরিবার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়ায় গ্রাম খাঁ খাঁ করছে। এমনকি নতুন প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে অনেক গ্রামে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হলেও সংখ্যালঘুরা নিজেদের নিরাপদ বোধ করছে না। বিভিন্ন জেলায় পূজা উদ্যাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, যশোরে কেশবপুর, মনিরামপুর, অভয়নগর, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ, শরনখোলা, কচুয়া, নড়াইলের লোহাগড়া, কালিয়া, মাগুরার শালিখা, শ্রীপুর, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরসহ খুলনা বিভাগের সবখানে সংখ্যালঘুদের ওপর সন্ত্রাসীরা লুটপাট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালিয়েছে। এখনও অনেক স্থানে হামলা অব্যাহত রয়েছে। তাই এসব এলাকার অনেক গ্রামের সংখ্যালঘু পরিবার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে চলে গেছে ভারতে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে তিল্লা গ্রামের অধিকাংশ সংখ্যালঘু পরিবার এখন গ্রামছাড়া। সন্ত্রাসীরা উপজেলার কয়েকটি ঋষিপাড়ার নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। ফলে ঐ ঋষিপাড়াগুলো এখন মানুষশূন্য। মাগুরার শ্রীপুরের নহাটার পালপাড়ার তিন যুবতীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে সন্ত্রাসীরা ধর্ষণ করে মঙ্গলবার রাতে। ঐ গ্রামের মানুষেরা এখন আসন্ন পূজার আনন্দ ভুলে গেছে। তারা এখন চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। কালীগঞ্জের অনেক পরিবার এখন যশোর শহরে আশ্রয় নিয়েছে। যশোরের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, অনেক জায়গায় এখনও প্রতিমা তৈরি করা হয়নি অথচ আর দেড় সপ্তাহ পরেই শুরু হবে তাদের শারদীয় দুর্গোৎসব। যশোরের মনিরামপুরের পলাশী গ্রামে সন্ত্রাসীরা প্রতিমা ভেঙ্গে দিয়েছে। ফলে ঐ গ্রামে মানুষের মাঝে এখন শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেক গ্রামে হামলার সময় সন্ত্রাসীরা বলেছে ভারতে গিয়ে পূজা কর, এখানে করতে পারবি না। এসব কারণে সংখ্যালঘু গ্রামে পূজার আনন্দ উঠে গেছে। অনেক স্থানে পূজা হবে না বলেও জানা গেছে। শুক্রবার যশোর জেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের নেতারা শহরের বেজপাড়ার পূজা মণ্ডপে এক জরুরী সভায় বসেন। এই বৈঠকে আগামী ২২ অক্টোবর থেকে দুর্গোৎসব উদযাপনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনা সভায় বক্তাদের অধিকাংশই বলেন, এবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পূজার আনন্দ নেই। নির্বাচনের পর বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কারণে পূজার আনন্দ তাদের দুঃখে পরিণত হয়েছে। কয়েকজন বক্তা পূজা বর্জনের কথা বললেও অধিকাংশ বক্তাই দূর্গোৎসবে সকল ধরনের আড়ম্বরতা বর্জন এবং প্রতিবাদী কর্মসূচী গ্রহণের উপর গুরুত্ব দেন।
দৈনিক জনকন্ঠ, ১৪ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন