নামের মিল থাকায় নিরপরাধ ৮০ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে সাত দিন কারাগারে কাটাতে হয়েছে। আদালতের আদেশে ১১ অক্টোবর রোববার বিকালে মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।

 

এর আগে রোববার বিকালে যুগ্ম ও জেলা জজ আদালতের বিচারক মো. আবুল বাসার আইনজীবীর যুক্তিতর্কের ভিত্তিতে ওই বৃদ্ধকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। একই সঙ্গে মূল আসামিকে জেলে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়।

গত ৪ অক্টোবর পটুয়াখালীর গলাচিপা থানার এএসআই আল-আমিন গলাচিপার বনানী এলাকার নিজ বাড়ি থেকে ওই বৃদ্ধকে আটক করেন। পরে ওই দিনই একটি চেক ডিজঅনার মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

পাশাপাশি অহেতুক এই বৃদ্ধকে হয়রানি করার ঘটনায় ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে জেলা পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের আইনজীবী এটিএম মোজাম্মেল হক তপন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশের অসর্তকতার বিষয়টি জানতে পেরে এসপি মোহম্মদ হাসান পুলিশের ওই এএসআই আল-আমিনকে ক্লোজ করেছেন বলে নিশ্চিত করেন গলাচিপা সার্কেল সিনিয়র সহকারী এসপি মো. ফারুক হোসেন।

ভুক্তভোগী হাবিবুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ আবু সালেহ জানান, গত ৪ অক্টোবর সাদা পোশাকে গলাচিপা থানার এএসআই আল-আমিন আমার বৃদ্ধ বাবাকে থানায় নিয়ে আসেন। এ সময় কারণ জানতে চাইলে এএসআই আল আমিন জানান, তার বাবাকে কথা বলার জন্য থানায় নেয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, থানায় নেয়ার পর পুলিশ জানায়- তার বাবার বিরুদ্ধে অর্থ প্রতারণার মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। তার বাবার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই বলে জানানো হলেও পুলিশ তাতে কান দেয়নি।

রোববার আদালতে শুনানি চলাকালে ভুক্তভোগী আদালতে বলেন, ইউনিফর্ম ছাড়া এক যুবক পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। বিনা কারণে তাকে অহেতুক হয়রানি করার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানান আদালতের কাছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গলাচিপা পৌর শহরের মুজিবনগর রোড এলাকার মৃত নূর মোহাম্মাদ মাস্টারের ছেলে থানা সংলগ্ন সদর রোডের ‘নাহার গার্মেন্টস‘র মালিক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ২০১২ সালের ৬ আগস্ট এনজিও থেকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন। এ সময় তিনি ব্র্যাকের অনুকূলে উত্তরা ব্যাংক গলাচিপা শাখায় তার নিজস্ব অ্যাকাউন্টের ঋণের সমপিরমাণ অর্থের একটি চেক জমা দেন।

কিন্তু মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ওই ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ হাবিবুর রহমানের জমাকৃত চেকটি ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল ওই ব্যাংকে জমা দিলে তাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা ডিজঅনার হয়। পরে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ ২ মে ২০১৩ তারিখে তাকে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। কিন্তু তিনি ঋণ গ্রহণ করেননি মর্মে ১৯ জুন ২০১৩ তারিখ লিখিতভাবে অবহিত করলে তারা ঋণগৃহীতা হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলায় পটুয়াখালীর যুগ্ম দায়রা জজ জিন্নাত জাহান ঝুনু ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ রায় দেন। রায়ে হাবিবুর রহমানকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ঋণের দ্বিগুণ অর্থ অর্থাৎ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধের আদেশ দেন। রায়ের দিন ঋণ গ্রহীতা হাবিবুর রহমান আদালতে অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

ওই গ্রেফতারি পরোয়ানা অনুযায়ী গলাচিপা থানা পুলিশের এএসআই আল আমিন কোনো যাচাই-বাছাই না করে ৮০ বছরের বৃদ্ধ মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে ৪ অক্টোবর দুপুরে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করেন এবং ওই দিনই তাকে পটুয়াখালী কারাগারে পাঠান।

যুগান্তর

মন্তব্য করুন